কালীতীর্থ বাংলা। আর, তার মধ্যে রাঢ় বাংলা যেন শক্তিসাধনার অনন্য কেন্দ্র। যা ভারতের শক্তি সাধনার আকাশে জন্ম দিয়েছে বহু সিদ্ধপুরুষের। এই সব সিদ্ধপুরুষের কারও কারও কথা ভক্তরা জানেন। কারওটা আবার রয়ে গিয়েছে প্রচারের আড়ালে। এমনই এক শক্তিসাধনার কেন্দ্র বর্ধমানের মানকর। সাধন কেন্দ্র হিসেবে যার পরিচিতি নির্দিষ্ট ভক্তশ্রেণির মধ্যেই থেকে গিয়েছে।
এখানে রয়েছে জাগ্রত দেবী বড়মা কালীর মন্দির। প্রতিবছর এই পুজোয় যোগ দিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন রামানন্দ গোস্বামী। ছোট থেকেই একনিষ্ঠ সাধক রামানন্দ, পরিবারের ইচ্ছায় টোলশিক্ষায় বিদ্যালাভের চেষ্টা করেন। কাব্যতীর্থ পাশের পরই অবশ্য তাঁর মনের বেশিটায় জায়গা করে নেয় শক্তিসাধনা। অধিকাংশ সময়ই শ্মশানে পড়ে থাকতে শুরু করেন। এনিয়ে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত বাবার কড়া শাসন রামানন্দকে প্রায়ই শুনতে হত।
কথিত আছে পরবর্তীতে সিদ্ধিলাভ করেন রামানন্দ। প্রতিবেশীদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে তাঁর বাবা ছেলেকে শ্মশানে খুঁজতে এসে কৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন। এমনটাও কথিত আছে সাধক রামানন্দের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে। ভক্তদের দাবি, রামকৃষ্ণ-বামাক্ষ্যাপাদের মত তিনিও দেবীর সঙ্গে কথাও বলতেন। তাঁর সাধনতীর্থ কাশ আর বেতবনে ঘেরা সেই শ্মশান আজ মানকরের ভট্টাচার্য পাড়া নামে পরিচিত। এই মন্দিরের ভক্তরা বংশ পরম্পরায় এখানে আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের দাবি, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের থেকে এই মন্দিরের বহু অলৌকিক ঘটনার কথা শুনেছেন।
আরও পড়ুন- ‘গালাগালি দিন, আত্মহত্যা করবেন না’, তাপসকে বিরাট ইঙ্গিত রাজ্যের প্রাক্তন এই মন্ত্রীর
কথিত আছে এখানে দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। রামানন্দের পরবর্তীতে এই মন্দিরের দায়িত্বভার যায় ভট্টাচার্যদের হাতে। কিন্তু, মন্দিরের অলৌকিক ঘটনায় তাতেও ছেদ পড়েনি। ভক্তদের দাবি, স্বয়ং দেবী এসে এখানে মন্দিরের সেবায়েত বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্যের সন্তান পরিচয়ে শাঁখা পরে গিয়েছিলেন। ভক্তদের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বয়ং দেবীই নাকি পুকুর থেকে চার হাত তুলে সেই শাখা দেখিয়েওছিলেন।
সেই থেকে সেই শাঁখারি পরিবার আজও দেবীর পুজোয় প্রতিবছর শাঁখা দান করে। শুধু কি তাই, স্বয়ং দেবী নাকি এই মন্দিরে প্রতিমাশিল্পীকে রাতে চক্ষুদান করতে বাধা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে এই মন্দিরে দিনেই চক্ষুদান করেন প্রতিমাশিল্পী। ভক্তদের দাবি, এমন অজস্র অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী মানকরের এই বড়মা কালীর মন্দির।