হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব নবরাত্রি পালন। বছরে তিনটি নবরাত্রি রয়েছে। তার মধ্যে চৈত্র মাসের নবরাত্রি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। কারণ, গোড়া থেকে এই সময়টাতেই হিন্দুদের মধ্যে নবরাত্রি পালন এবং চণ্ডী আরাধনার রীতি রয়েছে। দ্বিতীয় নবরাত্রি পালিত হয় আশ্বিন মাসে দেবী চণ্ডীর পুজোর সময়। আর, তৃতীয় নবরাত্রিটি হল গুপ্ত নবরাত্রি।
এর মধ্যে শরৎকালে বা আশ্বিন মাসে চণ্ডীর আরাধনার সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। শরতে আশ্বিন মাসে দেবী চণ্ডীর আরাধনার আগে চৈত্র মাসের এই সময়টাতে তাই পালিত হত চণ্ডীর আরাধনা। স্বয়ং রাবণও এই চৈত্র মাসেই চণ্ডীর আরাধনা করতেন। সেই কারণে শরতে বা আশ্বিন মাসে চণ্ডীর আরাধনাকে বলে দেবীর অকাল বোধন বা কাল অর্থাৎ সময়ের পূর্বেই আবাহন।
যার সূচনা হয়েছিল মহর্ষি মেধস ঋষির আশ্রমে। চণ্ডী অনুযায়ী, সুরথ রাজা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন মহর্ষি মেধসের আশ্রমে। সেখানে রাজ্য ও পরিবার বিচ্ছিন্ন রাজা দেখা পেয়েছিলেন সমাধি বৈশ্য বা এক ব্যবসায়ীর। রাজা জানতে পেরেছিলেন, সমাধিকে বণিককেও তাঁর স্ত্রী-ছেলে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও তিনি পরিবারের ভালোর কথা ভেবে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত মন্দির, যেখানে দেবীর আশীর্বাদ পেতে নিয়মিত যাতায়াত করেন বিশিষ্টরাও
এই পরিস্থিতিতে মহর্ষি মেধস রাজ্যচ্যুতে রাজা ও বণিককে শোনান 'মধুময়ী চণ্ডী'র কথা। ঋষির পরামর্শে দুঃখ দূর করে সম্পূর্ণ সুখ বা ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষলাভের জন্য সুরথ রাজা ও সমাধি বণিক দেবী চণ্ডীর আরাধানা করেছিলেন। মন্দিরের মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল দেবীর প্রতিমা। সময়টা ছিল বসন্তকালের শুক্লপক্ষ। চণ্ডী অনুযায়ী, এই পুজোয় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী মহামায়া রাজা সুরথকে তাঁর রাজ্য-সহ হারানো সবকিছু ফিরিয়ে দেন। হারানো সব ফিরে পেয়েছিলেন সমাধি বণিকও। সেই শুরু। যা বাসন্তী পুজো নামে পরিচিতি লাভ করে।
সেই অনুযায়ী হিন্দুদের প্রধান নবরাত্রি পালন ও চণ্ডী আরাধনা চলে চৈত্র মাসে এই সময়ই। প্রতিবছর বাঙালি থেকে অবাঙালি হিন্দুরা অতি গুরুত্বের সঙ্গে এই চৈত্র নবরাত্রি পালন করেন। অবাঙালিরা নবরাত্রিতে দেবীর নয়টি রূপের আরাধনা করেন। আর বাঙালিরা করেন বাসন্তী রূপে দেবী মহামায়া অর্থাৎ দেবী চণ্ডীর আরাধনা। বসন্তকালে আরাধনা করা হয় বলেই দেবীর নাম দেওয়া হয়েছে বাসন্তী।