Advertisment

আমার দুর্গা: পিয়ালি বসাক

এভারেস্ট শিখরের মাত্র ৪৫০ মিটার নীচ থেকে সমতলে ফিরে আসতে হয় পিয়ালিকে। ফিরে আসার পরের লড়াইও কম কিছু নয়। সাফল্য না এলে যে সমাজ ছেড়ে কথা বলে না, সেখানেই ফিরে আসা, আগামী বছরের জন্য ফের প্রস্তুতি নেওয়া, এসবের মাঝে একটুও হতাশা গ্রাস করেনি মেয়েটাকে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পিয়ালি বসাক

গল্পটা ঠিকসিনেমার মতো । বলা ভালো 'গল্প হলেও সত্যি'। আমরা সবাই কিছু না কিছু স্বপ্ন দেখেছি শৈশবে। বড় হওয়ার যুদ্ধে সে সব ফিকে হয়ে গিয়েছে কালে কালে। এই মেয়ের গল্পটা আর পাঁচজনের চাইতে অনেকটাই আলাদা। পাঁচ বছর বয়সে প্রথম স্বপ্ন দেখার শুরু। কিশলয়ের পাতায় হিলারি আর তেনজিং-এর গল্প পড়ে আর পাঁচটা শিশুর মতোই পিয়ালি ভেবে নিয়েছিল, বড় হলে হিমালয়ের বুকে দাপিয়ে বেড়াবে। রোদ্দুর হতে চাওয়া অমলকান্তিদের মত ছাপাঘানার অন্ধকার ঘরে বাকী জীবনটা কাটাতে হয়নি চন্দননগরের পিয়ালি বসাককে। অন্ধকার যে এসে পথ ঢাকেনি, তা কিন্তু নয়। তবে সে আঁধার থেকে বেরোতে চেয়ে আজীবন লড়াই করে গিয়েছে ২৯ বছরের মেয়েটা।

Advertisment

চন্দন নগরের বাসিন্দা পিয়ালি বসাক (২৮) অংক নিয়ে স্নাতক পাশ করে এখন এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। মাস ছয়েক আগে জোর খবরে এসেছিলেন এভারেস্ট অভিযানকে কেন্দ্র করে। নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েও নিশ্চিত ছিলেন না অভিযান আদৌ হবে কী না। অভিযানের মাঝপথেই বারবার চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। ক্রাউড ফান্ডিং-এর টাকা একটু একটু করে ভরসা জুগিয়েছে পিয়ালিকে। তারপরেও স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি পিয়ালির। পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকায় এভারেস্ট শিখরের মাত্র ৪৫০ মিটার নীচ থেকে সমতলে ফিরে আসতে হয় পিয়ালিকে। ফিরে আসার পরের লড়াইও কম কিছু নয়। সাফল্য না এলে যে সমাজ ছেড়ে কথা বলে না, সেখানেই ফিরে আসা, আগামী বছরের জন্য ফের প্রস্তুতি নেওয়া, এসবের মাঝে একটুও হতাশা গ্রাস করেনি মেয়েটাকে? পিয়ালির কথায়, "এভারেস্ট সামিট যখন হবে না বুঝতে পারছি, আমার অক্সিজেন সিলিন্ডারও শেষ হয়ে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে সবাইকে অনুরোধ করেছি। হতাশা মুহূর্তের জন্য আসেনি, তা নয়। তবে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আবার তৈরি করতে শুরু করেছি। আগামী বার আমায় শিখরে পৌঁছতেই হবে"।

আজকালকার দুর্গাদের লড়াইটা অন্যরকম। অশুভ শক্তির একবার বিনাশ হলেই নিশ্চিত হওয়া যায় না। মেয়েরা স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু ডানা ছেঁটে দেওয়ার হাজারটা পথও তৈরি হয়েছে চোরা গোপ্তা গলির মতো। আর এই সমাজের অসুরদের চিনতেও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। তাই আজকের দুর্গারা হেরে যাওয়াকে শেষ ভাবে না, বরং ঘুরে দাঁড়ায় জিতে যাবে বলে। সেই 'উঠে দাঁড়ানোয় অপরাজিতা' চন্দননগরের এই তরুণী।

আরও পড়ুন, আমার দুর্গা: মনীষা পৈলান

স্বপ্নের কাছাকাছি থাকতে পারার লড়াইটা খুব মসৃণ ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবনতির কারণে পর্বতারোহণের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হবে এই আশঙ্কা থেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে নেপালে পাড়ি দেওয়া। “লোকমুখে শোনা, যে নেপালে গাইড, পোর্টার এর কাজও করা যায়, তাই আমি ভেবেছিলাম ওখানে গেলে রোজগার হবে, বাবা মা কে  সাহায্য করতে পারব আর আমার হিমালয় চড়াও হবে এই ভেবে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাস আমার পরীক্ষার রেজাল্ট, যত সার্টিফিকেট, প্রিয় বই, আঁকার খাতা, পেনসিল, রং নিয়ে আমি একা একাই দার্জিলিং-মানেভঞ্জন হয়ে কালিপোখরি আর সান্দাকফুর মাঝামাঝি একটা ঘন জঙ্গল অর্থাৎ সিঙ্গালিলা forest এর ভেতর দিয়ে নেপাল এর ইলাম পৌঁছাই। স্থানীয় সেনারা বুঝতে পেরে বাড়িতে খবর দেন। ততোক্ষণে সংবাদপত্রে আমায় নিয়ে নিরুদ্দেশের খবর ছাপানো হয়ে গিয়েছে”।

piyali basak

গত বছর সেপ্টেম্বরেই প্রথম বাঙালি এবং দেশের প্রথম অসামরিক ভারতীয় হিসেবে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলু জয় করেন পিয়ালি। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৮ সালে পর্বতারোহণে বেসিক কোর্স। তারপর ২০১০ এ অ্যাডভান্স কোর্স করা। আঠাশ বছরের পিয়ালির অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে মুলকিলা-১০, মাউন্ট তিঞ্চেংকাং এর মতো শৃঙ্গ আরোহণ। রাজ্য সরকারের ডব্লিউবিএমএএসএফ -এর পক্ষ থেকে মহিলাদের দল নিয়ে আয়জিত অভিযানেরও অংশ ছিলেন পিয়ালি। ২০১৩ সালে ক্লাউড বার্স্টের জন্য সফল হয়নি ভাগীরথী-২ অভিযান।

স্বপ্ন ছুঁতে কতদূর যেতে পারে একটা মানুষ? উত্তরে পিয়ালি বললেন, "কত দূর? এর কোনও সীমা আছে না কি? যত দূর গেলে স্বপ্নের কাছে পৌঁছনো যাবে, তত দূর। সব কিছু করা যায় ওটার জন্য। সব কিছু ছাড়া যায়"। এই ইচ্ছে শক্তির কোনও ক্ষয় হয় না, হয় না বিসর্জন।

Durga Puja 2019
Advertisment