এমন কঠিন সময়ে দিনগুলোতে আলো পড়তে চায়না, যতই বছরের প্রথম দিন হোক। টিভিতে, খবরের কাগজে, খাবার টেবিল জুড়ে শুধু ভয়ের খবর। মৃত্যু মিছিলে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেজো কথা থামলেই যে নীরবতা আসছে, মিশে থাকছে অস্বস্তি। নীরবতা ভাঙলেই প্রথম খবর হয় মৃত্যুর, নয় অনাহারের। এসবের মধ্যেই কালের নিয়মে চলে এল নতুন বছর। বাঙালির নতুন বছর, ১৪২৭।
উৎসব নেই, উদযাপন নেই। কারোর ঘরে চাল বাড়ন্ত। কারোর প্রিয়জন পরবাসে। ভিডিও কলে সকাল বিকেল শুধু ভাগ করে নেওয়া আশঙ্কা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা। বিশ্বজুড়েই এক অবস্থা, এক অন্ধকার ছেয়ে আছে। এরই মধ্যে মনে পড়ে যায় আজ পয়লা বৈশাখ। দূরে থাকা কাছের মানুষকেও মনে করিয়ে দেয় কেউ। অন্যান্যবারের মতো আড়ম্বর নেই অধিকাংশ ঘরেই। তবে গ্হস্থের রান্নাঘরে আজ যেন একটু এলাচের গন্ধ, দুধ জাল দেওয়া হচ্ছে। পায়েস হবে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট কুচোটিকে হয়তো আসন পেতে ভাত বেড়ে দেওয়া হবে। বেঁচে থাকা গন্ধলেবুটুকু সেই পাবে। ঠাকুমার আলমারি থেকে বের হবে হাতপাখা খানা।
আরও পড়ুন, মিষ্টিমুখ নয়, মাস্ক মুখেই বাঙালির বর্ষবরণ
শবনমদের বাড়ি সিমুই হচ্ছে। প্রতি বছর নতুন বছরের প্রথম দিনটায় ওদের বাড়ি থেকে আসে সিমুই। সেই বাটিতেই বাড়ির সবার জন্য ছানার ডালনা দিয়ে দেন রানু মাসিমা। এ বার বাদ পড়ল। দূর থেকেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হল সকালে। ঝুপড়ির ঘরটায় আজ উনুন থেকে বেশি ধোঁয়া উঠছে যেন, হ্যাঁ মুগ ডাল ফোড়ন দেওয়ার গন্ধ আসছে ভেসে। যে বাতাসে শেষ কদিন শুধু শবদেহের গন্ধ ভাসছিল, আজ মুগডালের গন্ধে ভরে যাচ্ছে চারপাশ। ওবেলার চাল ফুরিয়েছে। তবু এ বেলা যত্ন করে রথিনকে খেতে দিয়েছে সদ্য বিয়ে করে ঝুপড়িতে এসে সংসার পাতা চম্পা। খেতে বসে ওর অলক্ষেই একমুঠো ভাতের পাত বদল করে হাত চাটতে চাটতে উঠে যাচ্ছে রথিন। ভাঙা ঘরটাতেই কাটছে দিনের বেশিটা সময়। কাজ নেই এখন।
মৃত্যুখাদের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেও মানুষ জীবনের উদযাপন করে তাহলে? করে তো, করছে তো, যে যার মতো করে। বেঁচে থাকাটাই তো উদযাপন। বছরের প্রথম দিন। নতুনের শুরু। কত আশা, কত স্বপ্ন-যত্ন-ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতে চায় মানুষ আগামীর দিনগুলো। সবার জন্য ভালো দিন আসবে। আসবেই।