পৌষ পার্বণ মানেই বাঙালির পিঠেপুলি উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম হল পৌষ সংক্রান্তি। বাঙালির রসনার স্বাদের ভাগ হয় না। তাই পিঠেপুলি উৎসব মানে হাজারো রকমের আয়োজন। নানা রকমের পিঠে শুধু নয়, থাকে নলেন গুড়ের পায়েসও। বাংলার পিঠে পায়েসের এত বড় সম্ভার, যে সেটা একটা শিল্পের জায়গায় পৌঁছে যায়। এই সব সাবেকি পিঠে যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাই এই ব্য়স্ততার যুগে কেমনভাবে বানাবেন পিঠে-পায়েস খুব সহজেই, আমি আজ তারই হদিশ দিলাম। সাবেকি রান্না নতুন মোড়কে পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দিন প্রিয়জনদের।
নোনতা ম্যারা পিঠে
উপকরণ:
চালের গুঁড়ো - ৫০০ গ্রাম
নুন - ১ চা-চামচ
জল প্রয়োজনমতো
পুরের জন্য আলু সেদ্ধ - ২টি বড়
কাঁচালঙ্কা কুচি - ১ চা-চামচ
নুন - পরিমাণমতো
হলুদগুঁড়ো - ১/২ চা-চামচ
সর্ষের তেল - ১ টেবিলচামচ
প্রণালী: প্রথমে একটা প্যানে চালের গুঁড়ো হালকা করে সেঁকে নিন ২-৩ মিনিট। বেশ ঝুরঝুরে হলে তাতে নুন ও অল্প করে ফুটন্ত জল দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিন। ঠান্ডা হতে দিন। এইবার ওই চালের গুঁড়ো ভাল করে ঠেসে নিন। প্রয়োজন হলে কিছুটা গরম জল দিতে পারেন। মাখাটা খুব মোলায়েম হবে। এবার ঢাকা দিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। অন্য একটা প্যানে সর্ষের তেল গরম করুন এবং তার মধ্যে আলুসেদ্ধ হাতে ভেঙে দিয়ে দিন। বাকি সব উপকরণ দিন ও আলুর সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিনিট ৩-৪ রান্না করে একটা ঝাল ঝাল পুর তৈরি করুন। মেখে রাখা চালের গুঁড়ো আবার ঠেসে নিন।
ঠেসে নেওয়া চালের মণ্ড থেকে লেচি কাটুন। এক একটা লেচির মধ্যে আলুর পুর ভরে পুলির আকারে গড়ে নিন। স্টিমারে জল ফুটতে দিন ও তৈরি করে রাখা পিঠেগুলি সাজিয়ে দিয়ে স্টিম করুন ৩০ মিনিট মাঝারি আঁচে। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে একটা টুথপিক পিঠের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখে নিন পিঠে সেদ্ধ হয়েছে কিনা। কাঠির গায়ে কিছু না লাগলে বুঝবেন পিঠে তৈরি। গরম গরম ম্যারা পিঠে নলেন পয়লা গুড় দিয়ে খান, দারুণ লাগবে। বাংলাদেশে এই পিঠে শুঁটকির ভর্তা কিংবা মাংসের ভুনা দিয়েও খাওয়া হয়।
মুগডালের ভাজা পিঠে
উপকরণ:
পিঠের জন্য লাগবে
ভাজা মুগ ডাল - ২০০ গ্রাম
চালের গুঁড়ো - ১০০ গ্রাম
নুন - স্বাদমতো
পুরের জন্য লাগবে
নারকেল কোরা - ১টা বড় নারকেল
খেজুরের গুড়
ভাজবার জন্য় সাদা তেল
প্রণালী: প্রথমে একটা কড়াইতে নারকেল কোরা ও গুড় দিয়ে পাক দিয়ে নিন। বেশ ভালো করে যখন পাক ধরবে এবং কড়াইয়ের গা থেকে যখন ছেড়ে আসবে তখন গ্য়াস বন্ধ করে পুর ঠান্ডা হতে দিন। ব্য়স, পুর তৈরি হয়ে গেল। মুগডাল হালকা করে শুকনো খোলায় ভেজে নিন। এইবার মুগডাল নুন দিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে সেদ্ধ করুন। এমন পরিমাণ জল দেবেন, যাতে জলও শুকিয়ে যাবে এবং ডালও সুসিদ্ধ হবে।
ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে চালের গুঁড়ো ও পরিমাণমতো নুন দিয়ে ভাল করে মেখে নিন। মাখাটা ঠিক লুচির ময়দার মতো মাখা হবে। এইবার ওই মাখা থেকে লেচি কাটুন এবং প্রতিটা লেচির মধ্যে নারকেলের পুর দিয়ে পুলি আকারে গড়ে নিতে হবে। কড়াইতে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে মুগের পুলি ২-৪টে করে তেলের মধ্যে দিয়ে সোনালি করে ভেজে তুলুন মাঝারি আঁচে। এই পিঠে খেতে খুব সুস্বাদু ও মুচমুচে। ইচ্ছা করলে আপনি এই পিঠে রসেও দিতে পারেন। তবে আমার মতে গরম গরম ভাজা পিঠে খাওয়ার মজাটাই আলাদা। এইবার আপনার ইচ্ছে।