Advertisment

বাংলার সবচেয়ে পুরোনো গির্জা, কতটা জানেন ব্যান্ডেল চার্চ সম্পর্কে?

মুঘলদের সঙ্গে পর্তুগিজদের সংঘর্ষ হয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bandel_church

ইংরেজি বছরের শেষ লগ্নে বরাবরই ব্যান্ডেল চার্চ নামটা বারবার শোনা যায়। বিশেষ করে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারিতে। মানুষজন এই সময়টায় পছন্দসই নানা জায়গায় ঘুরতে যান। তার মধ্যে অন্যতম জায়গা হল ব্যান্ডেল চার্চ। হাওড়া অথবা শিয়ালদা থেকে ট্রেন চেপে ব্যান্ডেলে যাওয়া যায়। সেখান থেকে রিক্সা, অক্টোরিকশা অথবা হেঁটেই যাওয়া যায় ২ কিলোমিটার দূরে ব্যান্ডেল চার্চে। আসল নামটা অবশ্য ব্যান্ডেল বেসিলিকা চার্চ।

Advertisment

ব্যান্ডেল নামটি এসেছে বান্দার শব্দ থেকে। যার অর্থ হল বন্দর। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে পর্তুগিজরা ব্যান্ডেল শহরটিকে বন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ অ্যাডমিরাল সাম্পায়ো যুদ্ধজাহাজ ও সেনা নিয়ে শের শাহকে আক্রমণ করেছিল। সেই যুদ্ধে পর্তুগিজরা জয়ী হয়েছিল। যার জেরে তারা গঙ্গার পাশে বাণিজ্যকুঠি গড়ে তুলতে পেরেছিল।

১৫৭১ সালে তারা মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে হুগলিতে শহর নির্মাণের অনুমতি পায়। তখন থেকে তারা হুগলিতে বসবাস শুরু করে। পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন পেড্রো তাভারেজ বন-জঙ্গল সাফ করে নতুন নগর ও বন্দর তৈরি করান। তিনি এই নতুন নগরের নাম দিয়েছিলেন উগোলিম। ইংরেজিতে যা ছিল আগলি। সেই নামেরই অপভ্রংশ হয়ে বাংলায় হয়ে ওঠে হুগলি।

এই সময় সর্বসমক্ষে ক্যাথলিক ধর্মপ্রচার ও গির্জা নির্মাণের অনুমতি পায় পর্তুগিজরা। ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে তারা হুগলি নদীর তীরে বন্দর ও দুর্গও নির্মাণ করে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধরে ধরে তারা ধর্মান্তরিত করে। এর ফলে হুগলিতে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পিতা জাহাঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে পর্তুগিজদের সাহায্য চান শাহজাহান। কিন্তু, পর্তুগিজ গভর্নর রডরিগ সেই সাহায্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন- গড়িয়ার কাছেই ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, জাগ্রত দেবীর কৃপায় মেলে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ

বদলা নিতে সম্রাট হয়েই ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সুবেদারকে ব্যান্ডেল অভিযানের নির্দেশ দেশ শাহজাহান। যুদ্ধে পর্তুগিজরা চূড়ান্ত পরাজিত হয়। বহু পর্তুগিজ ও ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান মারা যায়। পর্তুগিজদের দুর্গও ভেঙে দেয় মুঘলরা। পর্তুগিজ গভর্নর ও পাঁচ পাদরিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। প্রবীণ পাদরি জোয়ান ডে ক্রুজ ও চার হাজারের বেশি পর্তুগিজকে মুঘল রাজধানী আগ্রায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর মধ্যে ডে ক্রুজকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মত্ত হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু, হাতি ওই পাদরিকে হত্যার বদলে শুঁড়ে করে পিঠে বসিয়ে নেয়। তাকে অলৌলিক ঘটনা ধরে নিয়ে শাহজাহান ১৬৩৩ সালে ব্যান্ডেলের ৭৭৭ একর জমি পর্তুগিজদের নিষ্কর হিসেবে দান করেন। সেখানে তৈরি হয় নতুন গির্জা। ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে সেই নতুন গির্জার চুড়ো দেখে দিক নির্ণয় করে সেখানে পৌঁছে যায় একটা পর্তুগিজ জাহাজ। তিনি নিজের মানত অনুযায়ী, জাহাজের মাস্তুল গির্জাকে দান করেন। সেই মাস্তুল আজও রয়েছে ব্যান্ডেল চার্চে।

Mughal Invasion Portugal church
Advertisment