বাঙালি মানেই মিষ্টি আর মিষ্টি মানেই বাংলার নানান প্রান্তরে জুড়ে থাকা কিছু অনবদ্য স্বাদ, সঙ্গে অজানা ইতিহাস। শেষ পাতে মিষ্টি না পড়লে যেন একেবারেই ভাল লাগে না। এমনই কিছু মিষ্টির অজানা ইতিহাস আমরা তুলে ধরব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার বিশেষ প্রতিবেদনে। বর্ধমানের সীতাভোগ আর মিহিদানা, বাংলার রাজ ঘরানার এই দুই মিষ্টি দেশ তো বটেই তবে বিশ্ব দরবারে নিজের জায়গা করে নিয়েছে স্বমহিমায়। এমন মানুষ খুব কম আছেন যারা বর্ধমান গিয়ে এই দুই মিষ্টি বাক্সবন্দি করে নিয়ে আসেন না। তবে এর ইতিহাস অনেকেই জানেন না, খাবারের সঙ্গেই এর ইতিহাস জানলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
প্রসঙ্গ যখন সীতাভোগ আর মিহিদানা তখন খোদ বর্ধমানের কোনও মানুষের সঙ্গে কথা না বললেই নয়। গণেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্ণধার প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, এটি আসলে রাজ ঘরানার মিষ্টি। এক সময় বর্ধমানের আশেপাশে রাজারাই রাজত্ব করতেন, সুতরাং এটুকু বলা যায় যে ইংরেজ শাসনকালেই এই দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টির জন্ম। কম করে একশো বছর আগে তো হবেই। বাংলার রসনাতৃপ্তিতে এই দুই মিষ্টির অবদান দারুণ। কিন্তু ইতিহাস বলছে এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন স্বয়ং বাংলার বড়লাট লর্ড কার্জন।
সেইসময় বর্ধমানের রমরমা অবস্থা, রাজাদের রাজত্বে সমৃদ্ধি দেখার মতো। রাজা বিজয়চাঁদ মহাতাব সেই সময় রাজত্ব করছেন। হঠাৎ করেই বর্ধমান শহরে আসার খবর হয় বড়লাট লর্ড কার্জনের- সাল ১৯০৪, ১৪ অগস্ট। যথারীতি তাঁর উপস্থিতিতে বিরাট আয়োজন। একদিকে যেমন কার্জন গেট তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে মহাভোজের প্রস্তুতি। বর্ধমানের গোলাপবাগে বসেছিল মহাভোজের আসর। রকমারি রান্না তো হবেই তবে নিত্যনতুন কী থাকবে? শেষ পাতে মিষ্টি না হলে একেবারেই চলে না। অভিনব মিষ্টির খোঁজেই ডাক পড়ল বিখ্যাত এক ময়রার। রাজার অনুরোধেই নিপুণ দক্ষতায় বানালেন সীতাভোগ এবং মিহিদানা। খেয়েই দিব্য খুশি কার্জন সাহেব। শুধুই প্রশংসা করলেন এমনটাই নয়, বরং রীতিমতো পুরস্কার দিলেন সেই কারিগরকে। পরবর্তী সময়ে দেশ বিদেশের বহু বিদ্যান, রাজনীতিবিদরাও এই মিষ্টির প্রশংসা না করে পারেননি, তাদের মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অন্যতম।
প্রায় তিন পুরুষ ধরেই ব্যবসা করছেন প্রসেনজিৎ এবং তাঁর পরিবার। বললেন, "এই অভিনব স্বাদ আর কোনও জায়গার দোকানে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে নতুনত্ব আনার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। রাজ ঘরানার এই দুই মিষ্টির সঙ্গেই নলেন গুড়ের ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবং মানুষ এই নতুন স্বাদ এতই পছন্দ করেছেন যে বলার ভাষা নেই। শুধু একটাই কথা, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যেন এর গুণমান হারিয়ে না যায়। বর্ধমানের পরিচিতি নির্ভর করে এই দুই মিষ্টির ওপর। বাংলাদেশ, দুবাই ছাড়াও নানা দেশে এই মিষ্টির চাহিদা রয়েছে। ১১৮ বছর পার তাও এর জনপ্রিয়তা একেবারেই কমেনি।"
কীভাবে তৈরি হয় মিহিদানা ও সীতা ভোগ?
মিহিদানার আসল উপকরণ চালের গুড়োঁ, ঘি, চিনি এবং বেসন। যত্ন নিয়েই এটিকে বানানো হয়। এবং তার সঙ্গেই অল্প কিছুক্ষণ চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। সীতাভোগ তৈরি হয়, ছানা এবং চালের গুঁড়ো দিয়ে। সাধারণত প্রয়োজন সিতাশল চালের গুঁড়ো। তবে সবসময় পাওয়া যায় না তাই এই দিয়েই কাজ চালানো হয়।