বাংলার আনাচে কানাচে যখন তাক লাগানো মিষ্টির কথা চলছেই, তখন নবাবি হোক বা সুলতানি কিংবা জমিদারি, রাজবংশের সবথেকে প্রিয় মিষ্টির কথা না বললেই নয়। আর মিষ্টিসুখের কথা উঠলেই কৃষ্ণনগর স্পেশ্যাল সরপুরিয়া-সরভাজার প্রসঙ্গ থাকবে না, এটি কিন্তু হচ্ছে না।
এই মিষ্টি জড়িয়ে রয়েছে রাজবাড়ির সঙ্গে। মিষ্টি তৈরি করেছিলেন অধরচন্দ্র দাস মোদক। তারই প্রপৌত্র শ্রী গৌতম দাস বলেন, "আমার ঠাকুরদা যে কী অসম্ভব মিষ্টি বানিয়েছেন যাঁরা খোদ আমার দোকানের মিষ্টি খাননি তারা জানেন না। ১৯০২ সালে এই মিষ্টি তৈরি করেন তিনি। কিন্তু এটি তৈরির পিছনে কোনও বিশেষ কারণ নেই। একদিন হঠাৎ করেই দুধ জাল দিতে দিতে এই মিষ্টি বানিয়ে ফেলেন তিনি। তবে হ্যাঁ ওনার মাথায় ছিল স্বাস্থ্যকর কিছু বানাতে হবে, যাতে ভেজাল না থাকে।"
এই মিষ্টির সঙ্গে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির যোগাযোগ কতটা? উত্তরে তিনি বলেন, "শুনেছি এই মিষ্টি বানানোর পর ঠাকুরদা প্রথম সেখানেই নিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর ভুয়সী প্রশংসা করেন সকলে। ওঁদের এতই পছন্দ হয়ে যায়, যে তারপর থেকে তাঁদের কাছেই এই মিষ্টি বেশি বিক্রি হত। একটা সময় ছিল, যখন মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ফেরি করতেন আমার ঠাকুরদা। শুনেছি মহারাজের খুব ভাল লেগেছিল, উনি এমনকি রাজ রাজেশ্বরী পুজোতেও এই মিষ্টি আনাতেন। তবে হ্যাঁ দুধের সর ভেজে তৈরি বলেই এর নাম সরভাজা।"
আরও পড়ুন বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: দেশভাগের আগেই জন্ম এই মিষ্টির, নবদ্বীপের ক্ষীর দইয়ের ইতিহাস জানুন
শুনেছি এই মিষ্টি বানানোর সময় আতঙ্কে থাকতেন সকলেই, কিন্তু কেন? উত্তরে হেসে গৌতমবাবু বললেন, "আসল স্বাদ যাতে চুরি না হয় সেই ভয়ে! অর্থাৎ দরজা বন্ধ করেই এই মিষ্টি বানানো হত। এমন ভুবন ভোলানো স্বাদ কেউ হাতছাড়া করে? তাই জন্যই দরজা সপাটে বন্ধ থাকত।" তাহলে কি রেসিপি চুরি হয়নি বলতে চাইছেন? অনেকেই তো এখন এই মিষ্টি বানায়? তিনি বললেন, "বানাতেই পারে...কিন্তু স্পেশ্যাল এই স্বাদ আমাদের এখানেই পাবেন। আমি তো বলি ভারতের এক নম্বর মিষ্টি সরভাজা এবং সরপুরিয়া।"
বিদেশের বাজারে চাহিদা কেমন? গৌতমবাবু বলেন, "সেইভাবে বলতে পারব না, তবে হ্যাঁ এই সামনেই মায়াপুরে অনেক বিদেশি আসেন। তারপর রাজবাড়িতে অনেক ভিন্ন দেশের মানুষরা আসেন। তাঁরা যখন একবারের পর আবার আসেন তখন মনে করি ভাল লেগেছে তাঁদের। একবার তো একজন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় ফোন করে আমার সঙ্গে কথা বলিয়েছিলেন - তবে এটুকু বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গে এর চাহিদা রয়েছে, মানুষ অনেক সময় অনুষ্ঠান বিশেষে অর্ডার দেন।"
আরও পড়ুন বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: নবাবি আমলের এই মিষ্টি যেন সত্যিই রাজকীয়, ‘রসকদমের’ ইতিহাস জানুন
সবশেষে, কী স্পেশ্যাল থাকে যার জন্য এর এত স্বাদ? দুধের সর আসল জিনিস, কারণ সরেই দুধের আসল পুষ্টি, ক্রিম ভাব এগুলো থাকে। এছাড়া এই মিষ্টিতে পেস্তা, কাজু, ছানা, ক্ষীর এইতো থাকবেই।