পশ্চিমবঙ্গের নানান প্রান্তে বিখ্যাত সব মিষ্টি, তার সঙ্গে অজানা মন ভাল করা ইতিহাস, কোনটি নবাবি ঘরানার তো কোনটি দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত। আর মালদার রসকদম জড়িয়ে রয়েছে সুলতানি শাসনের সঙ্গে। অধুনা মালদা তখন গৌড় বাংলা নামে পরিচিত, কীভাবে তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় এই মিষ্টি?
Advertisment
মালদার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী, পাবনা সুইটসের কর্ণধার সুবোধ কুণ্ডু বললেন, "মালদা পশ্চিমবঙ্গের এক উল্লেখযোগ্য স্থান। এখানকার আম বলুন অথবা রসকদম, কিংবা কানসাট সবই জনপ্রিয়। তবে রসকদমের চাহিদা জনপ্রিয়তা একটু বেশিই।" সুবোধবাবু বলেন, "দেখুন পূর্বপুরুষের থেকে শোনা গল্প সেই সময় সুলতান হোসেন এখানে শাসন করছেন। চৈতন্য মহাপ্রভু তখনও গৌরাঙ্গ নামেই পরিচিত - তাঁর আগমনে তখন মহা ধুমধাম। এখানেই তিনি সনাতন প্রেম সম্পর্কে মানুষকে বার্তা দিয়েছিলেন এবং তাঁর এই আগমনের কারণেই রসকদমের সৃষ্টি। তিনি প্রেমের বাহক ছিলেন, ময়রাকে বলা হয়েছিল এমন এক মিষ্টি যেটি হবে মনের মতো, অর্থাৎ ভেতরটা নরম তবে বাইরের অংশ শক্ত। সেই থেকেই এই রসকদম নিজের রূপ পায়।"
মালদার রসকদম
মিষ্টি কিছুটা রসগোল্লার মতো কি? উত্তরে তিনি বললেন, "কিছুটা নয় ভিতরের সম্পূর্ণ অংশটিই রসগোল্লা। বাইরেটা ক্ষীরের মণ্ড। তার ওপর রয়েছে পোস্ত দানা। কামড় দিলে আগে শুকনো ভাব পড়ে নরম রসগোল্লা। অনেকে আবার লাল রঙের মাধ্যমে ভিতরের দিকটা রং করে দেন। শুনেছি অনেকেই পোস্তর দামের কারণে চিনির গুঁড়ো দিয়েও কোটিং করেন। তবে পুরনো দোকানে এসব হয় না।"
Advertisment
কী রকম চাহিদা রয়েছে এর পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায়? বেশ উচ্ছ্বাসের সুরেই সুবোধবাবু বলেন, "আমাদের এই মিষ্টি ছাড়াও খাজা বলুন অথবা চূর্ণ মিষ্টি অনেক কিছুই ছিল তবে সময়ের সঙ্গে সেটি হারিয়ে গেছে। এই রসকদম কিন্তু একেবারেই হারায়নি। আমাদের এখানে বিয়েবাড়ি বলুন অথবা পুজো-পার্বণ, এর চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনই বাংলার নানান জেলা থেকেও অর্ডার আসে। বিয়ের তত্বের জন্যও অনেকে নিয়ে যান।"
মালদার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে এই মিষ্টি। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, "আমাদের এখানে মানুষ আসেন এই মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করবে বলে। এক্কেবারেই কদম ফুলের আদলে দেখতে হয় এই মিষ্টি, দুর থেকে দেখলে অন্তত তাই মনে হবে - নামে ভিন্নতা রয়েছে। কেউ বলেন রসকদম কেউ বলেন ক্ষীরকদম বা রসকদম্ব। তবে এই স্বাদ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।"