বাংলার নানা প্রান্তে নানা মিষ্টি, তার স্বাদ যেমন আলাদা তেমনই তার ইতিহাস একেবারেই চমকে দেওয়ার মত। বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী তখন মুর্শিদাবাদ শহর, আর সেই অঞ্চলের ছানাবড়া আজও কিন্তু জগদ্বিখ্যাত। এর ইতিহাস থেকে নামকরণ সবেতেই অভিনবত্বের ছোঁয়া রয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে জানুন ছানাবড়ার ইতিহাস।
Advertisment
বহরমপুরের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মঞ্জুশ্রী সুইটসের কর্ণধার অরুণ দাস বলেন, এই মিষ্টির ইতিহাস বা কে এই মিষ্টি প্রথমে বানিয়েছিলেন তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। ধরে নেওয়া হয় এটি নবাবী আমলের মিষ্টি। এমনিতেও নবাবরা খানাপিনার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শোনা যায়, নবাবী আমলের শেষের দিকে এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন নিমাই মণ্ডল নামে এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। আবার এও শোনা যায়, খাগড়া সোনাপট্টি এলাকার পটল ওস্তাদ নাকি এই মিষ্টি প্রথম বানাতে শুরু করেন।
কিন্তু ছানাবড়া নাম কেন, কোনও বিশেষ কারণ? বললেন, "অবশ্যই! বাংলায় প্রবাদ রয়েছে চক্ষু ছানাবড়া - এই মিষ্টির থেকেই তো এসেছে সেই শব্দ। সেই সময় এক একটি ছানাবড়া ওজনে হত এক মন থেকে দেড় মন - যথারীতি সেই সাইজ তারপর চেখে দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তেন সকলে।" জানা যায়, ছানাকে ঘি দিয়ে ভাজা হত বলেই এই মিষ্টির নাম 'ছানাবড়া'।
মিষ্টির চাহিদা কেমন? এই শহরে আগে লালবাগ অঞ্চলে অনেক দোকান ছিল। এখন আর সেসব নেই। বরং বহরমপুর এলাকায় আজও ছানাবড়া মিষ্টির দোকান দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও গোটা বাংলায় এই মিষ্টি তৈরি হয়। অনেকেই বলেন, রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী এই মিষ্টি নাকি খুব ভালবাসতেন। তিনিই ছড়িয়ে দেন সারা বাংলায়।
কোনও বিখ্যাত মানুষ এই মিষ্টি খেয়েছেন? "বিখ্যাত মানে, এ তো সৌভাগ্য! স্বামী বিবেকানন্দ থেকে নেতাজি আমাদের এই মিষ্টি খেয়ে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন। তারপর, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এসেছিলেন এখানে। তাঁরাও মিষ্টি খেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন।" মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধায়ক হুমায়ুন কবীর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ৬৬ কেজি ওজনের ছানাবড়া উপহার দিয়েছেন। তাঁর কেমন লেগেছে এখনও জানা হয়নি। তবে হ্যাঁ, বাংলা ছাড়াও বিদেশে এই মিষ্টি অনেকেই পছন্দ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতালি, জার্মানি, ব্রাজিল সব জায়গায় পৌঁছেছিল এই মিষ্টি।