Advertisment

বাংলার 'মিষ্টি গল্প': দেশভাগের আগেই জন্ম এই মিষ্টির, নবদ্বীপের ক্ষীর দইয়ের ইতিহাস জানুন

সাধারণ দইয়ের থেকে স্বাদ একেবারেই আলাদা, এই মিষ্টিতে কোনও ভেজাল নেই

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
Bengal's Sweet Story: Nabadwip's famous Khir Doi

নবদ্বীপের ক্ষীর দই

শহর থেকে গ্রাম, বাংলার আনাচে কানাচে হরেকরকম মিষ্টি। কোনওটা জুড়ে রয়েছে জমিদারি নবাবিয়ানার সঙ্গে আবার কোনওটা দেশভাগের সময় থেকেই বাঙালির মিষ্টিসুখে অংশ নিয়ে আসছে। এমন একটি সুস্বাদু মিষ্টি হল, নবদ্বীপের ক্ষীর দই। এর ইতিহাসে অনেক রকমের গল্প কিন্তু রয়েছে। তবে তার থেকেও জটিল এটি তৈরির প্রক্রিয়া।

Advertisment

সাধারণ মিষ্টি দইয়ের থেকে একেবারেই আলাদা স্বাদ। মিষ্টির ভাব একটু বেশি তবে মুখে দিলে সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায়। নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মণ্ডল দই ঘরের ক্ষীর দই নির্মাতা রতন চৌধুরী বললেন, "এর ইতিহাস অনেক পুরনো। কারণ এর জন্ম হয়েছিল দেশভাগের প্রাক্কালে। ভারত ভাগের আগেই অধুনা বাংলাদেশের কিছু কারিগর এই ক্ষীর দই বহুদিন ধরেই তৈরি করছেন নবদ্বীপ শহরে। তারপর অনেকেই বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছেন। তাঁরাও এই মিষ্টির বিস্তার ঘটিয়েছেন। যেকথা না বললেই নয়, এই মিষ্টি তৈরিতে মোষের দুধ ছাড়া আর কিছুই চলবে না।"

Bengal's Sweet Story: Nabadwip's famous Khir Doi
সাধারণ মিষ্টি দইয়ের থেকে একেবারেই আলাদা স্বাদ।

তবে শোনা কথা পূর্বপুরুষদের থেকে, এই মিষ্টির স্রষ্টা নাকি কালী ঘোষ। তিনি নাকি লাল ঘোল বানাতেন। একসময় জলের সঙ্গে মোষের দুধ মিশিয়ে ফুটিয়ে ফুটিয়ে সেটি ক্রমশ লাল রংয়ের করা হত। এবং সেই দুধ জমে গেলেই নাকি ক্ষ্মীরের মতো দেখতে হত। অনেকেই বলেন, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় কালীপদ মোদক এই মিষ্টি প্রথম বানান।

কিন্তু এই মিষ্টির এত দাম কেন? উত্তরে রতনবাবু বলেন, "না হয়ে তো উপায় নেই। কারণ দুধ ফুটিয়ে ফুটিয়ে এর মাত্রা এতই কমাতে হয়, ধরে নিন দুপুর ২টো নাগাদ জালে বসালে রাত ১১টা অবধি সেটা জাল হবে। এতে কোনও ডালডা, ভেজাল কিছুই থাকে না। এক নম্বর জিনিস দিয়ে বানানো হয়। অনেকেই আপনাকে বলবে বিস্কুটের গুঁড়ো কিংবা চিনি আগে ক্যারামেল করে নিয়ে রং আনা হয়েছে তবে সেসব মিথ্যে কথা। যাঁরা এখানকার ব্যবসায়ী, ছোট থেকে মিষ্টি বানায় তাঁরা একদম শুরুতেই দুধ ফোটানোর সঙ্গেই অল্প একটু চিনি যোগ করে দেন। তবে ক্ষীর দই মানে এমন নয়, যে এতে ক্ষীর মেশানো হয়! ওই দুধ ফুটিয়ে আঠালো হয়ে যায়।"

আরও পড়ুন < বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: বিখ্যাত প্রবাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নাম, জানুন ‘ছানাবড়ার’ ইতিহাস >

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় কেমন জনপ্রিয়তা বুঝতে পারেন? রতনবাবু বলেন, "আগে যেমন শুধুই নবদ্বীপে পাওয়া যেত এই লাল দই। এখন অনেকটা বদল এসেছে। মানুষ এর এতই প্রশংসা করেছেন যে শহর কলকাতা বলুন কিংবা অন্যান্য জেলা, হাওড়া-হুগলি, অনেক মানুষ আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তাঁরা ব্যবসা করছেন আমাদের সঙ্গে। কেউ কেউ কেজিতে চেয়ে পাঠান আবার অনেকেই প্রচুর অর্ডার করেন। মানুষের চাহিদা বেড়েছে বলাই যায়।"

bengal sweets kheer doi
Advertisment