scorecardresearch

বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: স্বয়ং রামকৃষ্ণদেবের প্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন, কামারপুকুরের ‘সাদা বোঁদে’ স্বাদে অনন্য

আজও ঠাকুরের ভক্তরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও কামারপুকুর এসে এটি না নিয়ে বাড়ি ফেরেন না।

বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: স্বয়ং রামকৃষ্ণদেবের প্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন, কামারপুকুরের ‘সাদা বোঁদে’ স্বাদে অনন্য
কামারপুকুর সাদা বোঁদে

কামারপুকুর – হুগলি জেলার এই জনপদ, একজন মহামানবের কারণে জগদ্বিখ্যাত। তার দূরদর্শিতা, দক্ষতা, ধর্মের প্রতি জ্ঞান, বাস্তবতা সেই সময়েও হার মানায় সবকিছুকে। যুগের অবতার সেই মহান মানব ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। পরমাত্মার সঙ্গে তাঁর লীলা, শক্তির আরাধনা দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরে হলেও তার ঐশ্বরিক ক্ষমতার দর্শন মিলেছিল কামারপুকুর থেকেই। ঠাকুর ভীষণ খেতে ভালবাসতেন, আর মিষ্টির মধ্যে সবথেকে বেশি ভালবাসতেন সাদা বোঁদে। আজও কিন্তু সব জায়গায় এই মিষ্টি একেবারেই পাওয়া যায় না।

ঠাকুরের বেড়ে ওঠা, রাসমঞ্চে অভিনয় থেকে পাঠশালা পলায়ন – লাহা বাড়ির সঙ্গে তাঁর এক অদ্ভুত যোগাযোগ ছিল। কামারপুকুরের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সৌমিক লাহা বললেন, এই মিষ্টির ইতিহাস কিংবা কী ভাবনা চিন্তায় এটি বানানো হয় সেই সম্পর্কে কোনও ধারণা দিতে পারা সম্ভব নয়। তবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মিষ্টি খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন। প্রথমবার তিনি এই মিষ্টি খান তাঁর বন্ধু দুর্গাদাস মোদকের বাড়িতে। দুর্গাদাস মোদকের বাবা ছিলেন মধুসূদন মোদক, যথেষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যে একজন। বোঁদের সঙ্গে সাদা জিলিপি খেতেও কিন্তু তিনি বেশ ভালবাসতেন। অন্যদিকে সত্যকিঙ্কর মোদকের দোকানের সাদা বোঁদে সারদা মায়ের খুব পছন্দের মিষ্টি ছিল।

সাদা বোঁদে

আরও পড়ুন বাংলার ‘মিষ্টি-গল্প’: স্বয়ং লর্ড কার্জন খেয়ে স্বর্গীয় সুখ পেয়েছিলেন, জানুন সীতাভোগ-মিহিদানার ইতিহাস

মিষ্টির প্রসঙ্গেই তিনি আরও বলেন, “সাদা বোঁদে কামারপুকুর গ্রামের ঐতিহ্য। বলা উচিত এটি আর কোনও জায়গায় পাওয়া যায় না। অনেক চেষ্টা করছি, যাতে GI পাওয়া যায়, কামারপুকুর এই মিষ্টির ওপর নির্ভর করেই দাঁড়িয়ে আছে।” সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মিষ্টির খোঁজে ঠাকুরের অনেক ভক্তরাই ছুটে এসেছেন, তার মধ্যে শ্রীম ( কথামৃতের লেখক ) অন্যতম। এই মিষ্টির চাহিদা এতটাই বেশি, যে মানুষ এসে খালি হাতে ফিরবেন না এটি নিয়েই যাবেন। এমনকি কামারপুকুরে উৎসব, অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি সবকিছুতেই এই বোঁদের চাহিদা কিন্তু খুব বেশি। বোঁদে অনেকরকম হয়, তবে এমন হালকা মিষ্টি, এবং শুকনো ধাঁচের এ ভু-ভারতে কামারপুকুর ব্যাতীত অন্যত্র পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: ইংরেজ সাহেবের মন কাড়ে এই মিষ্টি, নজরকাড়া ‘মনোহরার’ ইতিহাস

ঠাকুরের সাদা বোঁদে এবং জিলিপির প্রতি অগাধ প্রেম ছিল। তাই তো বলতেন, পেট ভর্তি খাওয়া হলেও যদি জিলিপি আর শুকনো সাদা বোঁদে তাঁকে দেওয়া হয় তবে সেটি তিনি ছাড়তে পারবেন না। কেজির পর কেজি সাদা বোঁদে শেষ হতে একেবারেই বেশি সময় লাগে না। আজও কামারপুকুরে ঠাকুরের ভোগে, নিয়মিতই কিন্তু হাজির থাকে এই মিষ্টি। মহারাজ জানান, ভক্তরাই ঠাকুরের উদ্দেশ্যে অর্পণ করেন তাঁর প্রিয় খাবার এছাড়াও অনুষ্ঠানের দিনে তো থাকবেই।

কীভাবে তৈরি হয় এই মিষ্টি?

আতপ চাল এবং রম্ভা কলাই আজও ঢেঁকির সাহায্যে গুঁড়ো করা হয়। আগে ঘি দিয়েই তৈরি হত এখন সেটি সাদা তেলে তৈরি হয়। সেই থেকে মিশ্রণ তৈরি হয় যাকে খামি বলে, এটিকে ৪৫ মিনিট মতো মিষ্টির রসে ভিজিয়ে রাখা হয়। গরমে ৫-৭ দিন বাইরে রাখলেও এই মিষ্টি স্থায়ী হবে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Bengals sweet story shri ramakrishnadevs favourite sada bonde