Advertisment

মহরমের তাজিয়া মিছিলের ইতিহাস

মহিলাদের এবং শিশুদের বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এক বছর পরে অবশেষে জনগণের চাপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
'বিধির বিধানে অর্থনীতির সংকোচন'।।মহরম শোভাযাত্রা নয়।।'পুলওয়ামা হামলার দায় এড়াচ্ছে পাকিস্তান'

ছবি: শশী ঘোষ।

মহররমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোন ইতিহাস? কার কফিন তাঁরা এদিন নিয়ে যায়, তাত্পর্য কী? কারবালা শহীদদের পরিচয় ঠিক কী? এদিন কেন তারা শোক পালন করে? কেন নিজেদের আঘাত করে কষ্ট দেয়? তাজিয়া মিছিলের পিছনে ইতিহাসটা কী?

Advertisment

ইতিহাসবিদ রানা সাফভীর বলা ইমাম হুসেন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য সামনে এনে ছিলেন মহাত্মাগান্ধী, তিনি বলেছিলেন, "আমি হুসেনের কাছে থেকে শিখেছি, কীভাবে অন্যায়ের শিকার হতে হয়, কীভাবে বিজয়ী হতে হয়। কীভাবে নিপীড়িত হয়েও বিজয় অর্জন করা যায়। ”

আপাত দৃষ্টিতে আমারা দেখি মহরমে তাজিয়া মিছিল বের হয়। সঙ্গে থাকে ইমাম হুসেনের কফিনের প্রতিলিপি। তিক্ততার সঙ্গে অথচ আবেগঘন হয়ে পালন করা হয় শোক। দশ দিনের রীতি রেওয়াজের শেষ দিনে পালন করা হয় মহরম। এদিনই বের হয় তাজিয়া মিছিল।

ইসলাম ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসকে পবিত্র মনে করা হয়। মহরম থেকে শুরু হয় তাদের ইসলামিক নিউ ইয়ার। বলা হয়ে থাকে, যে এই মাসে আব্রাহাম আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং নোহের সিন্দুক এই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। এই কারণে, ইহুদিরা মাসের দশম দিন উপবাস করে, সুন্নি মুসলমানরা নবম এবং দশম, বা দশম ও একাদশতম দিনে রোজা রাখেন। হযরত মহম্মদও মহররম চলাকালীন রোজা রেখেছিলেন বলে জানা যায়।

এই ইতিহাস বাদেও রয়েছে আরও একটা ইতিহাস কারবালা যুদ্ধ

মহরমের সময়ে দশ দিন ধরে উমাইয়া খলিফা ইয়াজাদের সেনাবাহিনী এবং হযরত মহম্মদের নাতি ইমাম হুসেনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, যে যুদ্ধকে অনেকেই 'খালিফা' বলেন।

ইমাম হুসেন যখন মক্কায় বাস করছিলেন, তখন কুফার কয়েকজন মুসলমান তাঁর কাছে চিঠি পাঠায়, যেখানে অনুরোধের সুরে বলা ছিল, সেই মুসলমানদের ইয়াজিদের শাসন থেকে উদ্ধার করতে হবে।

সেই চিঠি মোতাবক, ইমাম হুসেন কুফার দিকে অগ্রসর হন, ইয়াজিদের সেনাপতিরাও এগিয়ে আসে। কিন্তু সে সময় সেনাবাহিনীদের শক্তি, জোর, তাদের কারবালার প্রান্তরে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। ইমাম মহিলা ও শিশু সহ ৭১ জন যুদ্ধ- পুরুষকে নিয়ে কুফার দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১০ দিন ধরে কারবাল প্রান্তরে ইয়াজিদের নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, অন্যায় সহ্য করতে হয়েছিল তাঁদের।

সপ্তম দিনে, ইউফ্রেটিস নদীর জল ব্যবহার করাও বন্ধ করে দেয়। ইমাম হুসেন আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করেন, শেষ পর্যন্ত দশম দিনে লড়াই শুরু হয়। তার ভাইয়ের মেয়ে এবং তাঁর ছয় মাসের শিশু সহ ইমাম হুসেনের সমস্ত অনুসারী শহীদ হয়েছিলেন সেখানে, এমনকি তাদের শ্রাদ্ধ শান্তি করতেও দেওয়া হয়নি পরিবারকে।

মহিলাদের এবং শিশুদের বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এক বছর পরে অবশেষে জনগণের চাপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

ইমাম হুসেনের লক্ষ্য খুবই পরিষ্কার ছিল - তাঁর এটি একার রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই ছিল না। তিনি মানুষকে অন্যায় শাসন থেকে মুক্ত করে ইসলামের সত্য পথে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। তিনি কুফায় যাওয়ার পথে নারী ও শিশুদের নিয়ে এগিয়েছিলেন, এ থেকেই বোঝা যায় যে তিনি যুদ্ধ করতে চাননি।

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী নাদিম রেজভী বলেছেন: “মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার সময়েও - ইমাম হুসেন  ইয়াজিদের অত্যাচারকে বিবেচনা করেছিলেন। তাদের সামনে মাথা নত করতেও অস্বীকার করেছিলেন। তিনি দৃঢ় ছিলেন কারণ তিনি জানতেন, যে তিনি সঠিক। তাঁকে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে মুখোমুখি হয়ে হয়েছিল।  যুদ্ধ করতে যাননি, তা সত্ত্বেও কঠোর সেনাবাহিনীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হয়েছিল।

প্রতি বছর মহরমে শিয়ারা ইমাম হুসেন ও তার অনুসারীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ এবং তাঁর বাণী প্রচার করা হয়। ইতিহাস বিদ সাফভী বলেন “ইমাম হুসেনের পরিবার কখনই তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা শোক করে থাকি এদিন কারণ সে সময় অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁর মা ফাতিমা এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল আমরা তা করি এইদিন”।

১০ দিন কী কী পালন করা হয়?

প্রথম সভা হুসেনের বোন, জয়নবের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি যুদ্ধের পরে তিন দিন সিরিয়ায় ছিলেন। এই সময়ে, তিনি একটি সভায় শহীদদের নৃশংস হত্যার বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেখানে উল্লেখ করেছিলেন যে তিন দিন ধরে তাঁরা তৃষ্ণার্ত ছিলেন।

সভায় সাধারণত তিনটি অংশ থাকে - সোজ, হাদিস এবং নূহা। ইমাম হুসেন সহ তার সঙ্গীদের, যুদ্ধের পরে কারাবন্দী থাকাকালীন যে নিপীড়িত অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে সোজে। হাদিসকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা হয় - ফাজায়েল এবং মাসায়েব। পরিবার-পরিজনের জীবন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে ফাজায়েলে। মাসায়েবে যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ”

নূহা হচ্ছে সভার শেষ অংশ, যা পড়লে গায়ে কাঁটা দেয় বলে জানিয়েছে ইতিহাসবিদ। কী কী ভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল তার বিবরণ দেওয়া হয় এই ছত্রে।

মহরমের দশ দিনে, প্রথম থেকে চতুর্থ দিন ইমাম হুসেনের অনুসারীদের জন্য সংরক্ষিত। পঞ্চম থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোক প্রকাশ করা হয়। নবম দিনে ইমাম হুসেন এবং তাঁর ছয় মাসের শিশুর জন্য বরাদ্দ। শেষ দিন মিছিল করে তাকে কফিনে রেখে (প্রতিলিপি), বিকেল ৫ টার দিকে তাঁর শেষকৃত্য করা হয়, যে সময় ইমাম হুসেনকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

এবছর করোনা পরিস্থিতিতে মহরম শোভাযাত্রায় অনুমতি দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে মহরমের শোভাযাত্রা হলে একটা গোষ্ঠীকে করোনা সংক্রমণের জন্য় টার্গেট করা হতে পারে, এমনই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের, সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর।

* বিচারপতিদের বেঞ্চ জানায়, ”আমরা যদি অনুমতি দিই, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে করোনা সংক্রমণের জন্য় টার্গেট করা হবে। আমরা সেটা চাই না”।

* শীর্ষ আদালত এদিন এও জানায়, ”আদালত হিসেবে আমরা মানুষের স্বাস্থ্য়ের ঝুঁকি নিতে পারি না”।

*প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না ও বিচারপতি ভি রামসুব্রহ্ম্য়ননের বেঞ্চ এদিন লখনউয়ের শিয়া নেতা সৈয়দ কালবে জাওয়াদকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে নির্দেশ দেন, যাতে লখনউয়ে সীমিতভাবে শোভাযাত্রা করা যায়।

maha
Advertisment