উত্তর ২৪ পরগনায় শক্তি আরাধনার অন্যতম কেন্দ্র পানিহাটির ভবানী কালী মন্দির। পানিহাটি ফেরিঘাটের কাছে এই মন্দির অতি প্রাচীন। কথিত আছে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে বেড়াচাঁপার রাজা ছিলেন চন্দ্রকেতু। তিনি দুর্গ বা গড় স্থাপন করেছিলেন। সেই গড় বা দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী ছিলেন দেবী ভবানী। যা আসলে দেবী কালীর মূর্তি। পরবর্তী সময়ে যবনদের হানায় রাজা চন্দ্রকেতুর বংশধররা যুদ্ধে নিহত হন। রাজপরিবারের পুরোহিত ভিন্নমতে এক ব্রহ্মচারী সেই সময় দেবীর বিগ্রহ নিয়ে পালিয়ে আসেন পানিহাটির গঙ্গাতীরে। সেখানেই পঞ্চমুণ্ডি আসন স্থাপন করে তিনি দেবীর পূজা শুরু করেন। অন্যমতে, রাজা চন্দ্রকেতু পানিহাটিতে গড় বা দুর্গ তৈরি করেছিলেন। সেই গড়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবীই ছিলেন এই দেবীমূর্তি।
পরবর্তীতে ওই ব্রহ্মচারীর শিষ্য পরম্পরায় সেই পুজো চলতে থাকে। সেই শিষ্যরাও প্রত্যেকে ব্রহ্মচারীই ছিলেন। তার মধ্যে শেষ ব্রহ্মচারী স্থানীয় ভক্ত নসিরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পুজোর ভার দিয়ে দেহ রাখেন। নসিরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে ত্রাণনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০০ সালের মে মাসে ব্রিটিশশাসিত ভারতে পানিহাটি পুরসভার প্রথম পৌরপ্রধান নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি এই কালীমন্দিরটি সংস্কার করেন। ভবানী কালীমন্দিরের নতুন নাম হয় ত্রাণনাথ কালীবাড়ি। সেই সময় তিনি গঙ্গার ঘাটটিকেও বাঁধিয়ে দেন। যার নাম হয় ত্রাণনাথ ঘাট। তবে, ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আজও গড়ভবানী নামে একটি গঙ্গার ঘাট রয়ে গিয়েছে এই মন্দির থেকে কয়েক হাত দূরে।
আরও পড়ুন- নাটোরের রাজমাতার দেওয়ানের রাসবাড়ি এবং রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির, আজও পানিহাটির আকর্ষণ
এ তো গেল ইতিহাস। এবার আসা যাক এই কালীমন্দিরের কথায়। পানিহাটি ফেরিঘাটের কাছে এই মন্দির উঁচু বেদির ওপর স্থাপিত। তিনটি খিলান রয়েছে এই মন্দিরের। মন্দিরটি দক্ষিণমুখী, পঞ্চরত্ন শৈলিতে তৈরি। মন্দিরের শিখরগুলো খাঁজকাটা। আর, এর কার্নিস সোজা। গর্ভগৃহের সামনে রয়েছে অলিন্দ। গর্ভগৃহে দেবীর মূর্তি কষ্টিপাথরে তৈরি। একটি কাঠের সিংহাসনে এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। নিত্য পুজো হয় দেবীর। কথিত আছে আগে সিংহাসনটি রুপোর ছিল। কিন্তু, দেশে জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৫ সালে সিংহাসনটি চুরি হয়ে যায়।
এই মন্দির সংলগ্ন তিনটি আটচালা, পশ্চিমমুখী শিবমন্দির আছে। প্রতিটি মন্দিরেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে শিবলিঙ্গ। এর মধ্যে দুটি শিবলিঙ্গ কষ্টিপাথরের। আর তৃতীয় শিবলিঙ্গটির গোরীপট্ট শ্বেতপাথরের এবং লিঙ্গভাগ কষ্টিপাথরের। যাকে শিব এবং শক্তির মিলনরূপ বলেই মনে করেন ভক্তরা।