কথিত আছে ভয়ংকর ক্ষমতাশালী রাবণের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য শ্রীরামচন্দ্রকে নিতে হয়েছিল দেবী দুর্গার আশীর্বাদ। আর, রাবণের ভাই মহীরাবণের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য শরণাপন্ন হতে হয়েছিল দেবী ভদ্রকালীর। যিনি আসলে দেবী দুর্গারই ভিন্নরূপ।
মহীরাবণ বধের পর পাতালের দেবী ভদ্রকালীকে শ্রীরামচন্দ্র নিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে। এই ভদ্রকালীই দিনের পর দিন পূজিতা হয়ে চলেছেন বাংলার সতীপীঠে। তবে, ভদ্রকালী না, রাঢবঙ্গ দেবীকে চেনে যোগাদ্যা নামে। যাঁর আশীর্বাদে আইনি যুদ্ধ থেকে খেলাধুলো অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে মেলে সাফল্য।
রেলের কাটোয়া-বর্ধমান শাখার কাটোয়া থেকে ১৭ কিলোমিটার, আর বর্ধমান থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে কৈচর স্টেশন। সেখান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ক্ষীরগ্রাম। মঙ্গলকোট ব্লকের কাছে এই ক্ষীরগ্রামে দেবী যোগাদ্যার মন্দির। কথিত আছে, ক্ষীরগ্রামে দেবীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল। অন্নদামঙ্গলে রয়েছে, 'ক্ষীরগ্রামে ডানি পার অঙ্গুষ্ঠ ভৈরব। যুগাদ্যা দেবতা ক্ষীরখণ্ডক ভৈরব।'
এই দেবী যোগাদ্যা হলেন সিংহপৃষ্ঠে আসীন কালো কষ্টিপাথরের দশভুজা মহিষমর্দিনী। যিনি সারাবছর মন্দিরের লাগোয়া ক্ষীরদিঘির জলে থাকেন। বছরে মাত্র ৬ দিন মন্দিরে আসেন। তার মধ্যে অবশ্য মাত্র দু'দিনের জন্য তাঁকে দর্শনের সুযোগ পান ভক্তরা।
বৈশাখের সংক্রান্তিতে দেবীকে জল থেকে তোলা হয়। সেই সময় মন্দিরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। বসে, বড় আকারের মেলাও। এই সময় ভক্তরা দেবীকে দেখার সুযোগ পান। এছাড়া আষাঢ় নবমী, বিজয়া দশমী, ১৫ পৌষ, মকর সংক্রান্তিতেও দেবীকে তোলা হয় জল থেকে। তবে, এই সময় দেবীর দেখা পান না ভক্তরা। দেবীকে আড়ালেই রেখে চলে আরাধনা।
আরও পড়ুন- এই সেই তীর্থক্ষেত্র, যেখানে এলে দূর হয়ে যায় অমঙ্গল, কেটে যায় বিপদ
বহু অলৌকিক কাহিনি রয়েছে এই যোগাদ্যা দেবীকে ঘিরে। সেই সব কাহিনির শিক্ষা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করেন ক্ষীরগ্রামবাসী। যেমন, মন্দির আর ক্ষীরদিঘি থেকে খানিকটা দূরে ধামাসদিঘি। কথিত আছে, এই দিঘির পাড়েই বধূ বেশে শাঁখা পরেছিলেন দেবী উমা। সেই রীতি মেনে বৈশাখের সংক্রান্তিতে শাখা পরেন ক্ষীরগ্রামের বধূরা।
আছে নিশিঢম্বুল প্রথাও। পৌষ থেকে মাঘ সংক্রান্তি অবধি এই প্রথা মানা হয়। ঢাকি রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা অবধি চোখে কাপড় বেঁধে ঢাক বাজান। ঢাকি ছাড়া সেখানে আর কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না। আর, সেই ঢাকের তালে দেবী নাকি নাচেন। যা স্পষ্ট বুঝতে পারেন ঢাকি। এই প্রথা চলাকালীন ঢাকিকে মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাস্নান করতে হয়। দেবীর ভোগ ছাড়া বাইরের খাবার খেতে পারেন না। বাড়িতে স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সঙ্গেও এই একমাস থাকতে পারেন না তিনি।