"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।" সেই অমর বাণীই এবার আওড়াবেন ওঁরা। এতদিন কালীপুজো শেষে ভাতৃদ্বিতীয়া এলে ওঁদের মুখভার হয়ে থাকত। চারদিকে যখন শঙ্খধ্বনিতে গমগম করত, তখন ওঁরা হতাশ মুখে স্বপ্ন দেখতেন কবে আসবে সেদিন, যেদিন ওঁরাও শাড়ি পরে ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় ফোঁটা দেবেন। এবার সেই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে ওঁদের। আইন ওঁদের নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমাজ কি পেরেছে ওঁদের নারী মনকে কাছে টানতে? এবারের ভাইফোঁটা তাই ওঁদের জন্য ‘বোনফোঁটা’। এবার প্রথমবার রূপান্তরকামীরা ভাইফোঁটা দিচ্ছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'বোনফোঁটা', সৌজন্যে 'সংবেদন' নামে উত্তর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
এই অভিনব উদ্যোগ প্রসঙ্গে সংবেদনের সমিত সাহা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "রূপান্তরকামীদের আইনি স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক স্বীকৃতি মেলেনি। সমাজ এখনও ওঁদের বোন রূপে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই ওঁদের জন্য সামাজিক বার্তা দিতেই এই ভাবনা।" বোনফোঁটা কেন? জবাবে সমিত বললেন, "ভাইফোঁটাই আমরা সেলিব্রেট করি। কিন্তু প্রথমবার রূপান্তরকামীরা ভাইদের ফোঁটা দেবেন। অর্থাৎ ওঁরা প্রথমবার বোন হিসেবে ফোঁটা দিচ্ছেন। তাই ওঁদের বোন হিসেবে প্রাধান্য দিতেই বোনফোঁটা বলছি।"
কাদের ফোঁটা দেবেন রূপান্তরকামীরা? উত্তরে সমিত বললেন, "দেশের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ ছাড়াও আরও কয়েকজন থাকছেন এই অনুষ্ঠানে। অনেকে থাকছেন, যাঁরা এখনও রূপান্তরকামী হননি, তাঁরাও ফোঁটা দেবেন। এখানে আমাদের সংস্থার যেসব বাচ্চারা রয়েছে, ওদের ফোঁটা দেবেন।" সেদিন ফোঁটা নেবে বেশ কয়েকজন স্পেশাল চাইল্ডও। তাছাড়া রূপান্তরকামী বোনেরা রূপান্তরকামী ভাইদেরও ফোঁটা দেবেন সেদিন।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে আলোর বাজারে ঘনিয়েছে অন্ধকার
বোনফোঁটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ। প্রধান অতিথি হিসেবে মেঘও ফোঁটা দিচ্ছেন। তিনি বললেন, "রূপান্তরকামীরা যেহেতু সমাজে ব্রাত্য, তাই এই উদ্যোগ। ফোঁটা একটা মঙ্গলসূচক বার্তা, তাই এবার রূপান্তরকামীরা যেমন ফোঁটা দেবে, আবার আমাদের কপালেও ফোঁটা দেবে স্পেশাল চাইল্ডরা।"
গত বছর ভাই হিসেবে বোন-দিদিদের ফোঁটা নিয়েছিলেন রাজ দাস। যিনি রূপান্তরকামী হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। বোনফোঁটা নিয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত রাজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "গত বছর ভাই হিসেবে ফোঁটা নিয়েছিলাম। এবার প্রথমবার বোন হিসেবে ফোঁটা দেব। জীবনে একটা আলাদা অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। স্বপ্নপূরণের মতো।" প্রথমবার ফোঁটা দেওয়ার সুযোগ মেলায় বেশ উত্তেজিত আরেক রূপান্তরকামী কুসুম সামন্ত। তিনি বললেন, "সবসময় ভাবতাম আমার বোন-দিদিরা ফোঁটা দিচ্ছে, আমি কবে দেব। একটা সুপ্ত বাসনা ছিল। এবার প্রথমবার ফোঁটা দেব ওই সংগঠনে, খুব আনন্দ হচ্ছে, গর্বিত বোধ করছি।"
অন্যদিকে, মানবী ফাউন্ডেশন ও দুর্বারের যৌথ উদ্যোগে পালিত হল বোনফোঁটা। রূপান্তরকামীরা দুর্বার সমিতির মহিলাদের কপালে ফোঁটা দিলেন এদিন।