Advertisment

এবছর কতক্ষণ ভাইফোঁটা, কোথা থেকে এল ফোঁটার প্রথা?

একেক জায়গায় ভাইফোঁটার একেক নাম।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Bhai_Phota

ভাইফোঁটা

কখন ভাইফোঁটা
প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ায় পালিত হয় ভাইফোঁটা। মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর দুপুর ২ টো ৩৬ মিনিটে দ্বিতীয় শুরু হবে। শেষ হবে পরদিন, ১৫ নভেম্বর দুপুর ১ টা ৪৭ মিনিটে। কথিত আছে, এই তিথিতেই যমুনা তাঁর ভাই যমকে বাড়ি ডেকে ফোঁটা দিয়ে খেতে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই তিথি যমদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। তবে কথিত আছে, জন্মবারে ভাইকে ফোঁটা দিতে নেই।

Advertisment

ভাইফোঁটার নানা নাম
পশ্চিমবঙ্গে এই তিথি 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া' নামে পরিচিত হলেও বিভিন্ন জায়গায় এর বিভিন্ন নাম। মহারাষ্ট্র, গুজরাতে এই উৎসবকে বলে 'ভাউ বিজ'। উত্তরপ্রদেশে বলে 'ভাইদুঁজ'। বিহারে পরিচিত 'ভাই দুজ গোধন' নামে। নেপালে বলে, 'ভাইটিকা'। ভারতীয় সংস্কৃতিতে ভাইফোঁটা যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৫২৭ বছর আগেও চালু ছিল। জৈন ধর্মের প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীরের সময়কালেও তার প্রচলন ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণাদি তার সাক্ষ্য দেয়।

ভাইফোঁটা উৎস সম্পর্কে যম-কাহিনি
সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার মেয়ে যমুনা, ছেলে যম। সূর্যের উত্তাপ সহ্য করতে না-পেরে সংজ্ঞা তাঁর সতীন ছায়ার কাছে যম ও যমুনাকে রেখে চলে গিয়েছিলেন। ছায়া কখনও যম ও যমুনাকে সহ্য করতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, ছায়া ছলনা করে স্বর্গ থেকে যমুনাকে বিতাড়িত করেন। যমুনার বিয়ে হয়। খোঁজ পেয়ে যম যান যমুনার বাড়ি। যমুনার স্নেহ ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ যম বর দিতে চান। যমুনা তখন ভাইদের মঙ্গল কামনায় দিনটিকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালনের অনুমতি চান। যম সেই প্রার্থনা পূরণ করেন। সেই থেকে তিথিটি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালিত হওয়া শুরু করে। আর, যমুনার মঙ্গল কামনায় যমও অমরত্ব লাভ করেন। সেই কাহিনি অনুযায়ী রচিত হয়েছে, 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা। যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা। আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা' কথাগুলো।

ভাইফোঁটার উৎস সম্পর্কে বলি-কাহিনি
বামন অবতারে বলির দানে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাঁকে অমরত্ব দিয়েছিলেন। সঙ্গে, বলির দ্বাররক্ষী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার প্রার্থনাও পূরণ করেছিলেন। বিষ্ণুকে ছাড়া লক্ষ্মীদেবী চঞ্চলা হয়ে উঠে বলির কাছে যান। তাঁকে ভাই হিসেবে সম্পর্ক স্থাপন করে ফোঁটা দেন। ফোঁটা দেওয়ার পালটা উপহার হিসেবে বিষ্ণুকে ফেরত চাইলে, বলি লক্ষ্মীদেবীর সেই প্রার্থনা পূরণ করেন। তিথিটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া।

ভাইফোঁটার উৎস সম্পর্কে কৃষ্ণ-কাহিনি
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, ভূতচতুর্দশীতে নরকাসুরকে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ। তিনি দ্বারকায় ফিরলে বোন সুভদ্রা, ভাইয়ের কপালে বিজয় তিলক পরিয়েছিলেন, মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন। সেই থেকে ভাইফোঁটার প্রচলন বলেও কথিত আছে।

আরও পড়ুন- কন্যারূপে এসে সাহায্য করেছিলেন কালী, রামপ্রসাদের বসতবাড়িতে আজও পূজিতা হন দেবী

কেন কড়ে আঙুল দিয়েই ফোঁটা দেওয়া হয়?
নারী প্রকৃতির রূপ। আমাদের পাঁচ আঙুলে পঞ্চভূত থাকে। কড়ে আঙুল ব্যোম বা মহাশূন্যের প্রতীক। ফোঁটায় কড়ে আঙুল ব্যবহার তাই মহাশূন্যের মতো বিরাট উদারতা, স্নেহ এবং ভালোবাসার চিহ্ন। আগে কানে এবং কণ্ঠতেও ফোঁটা দেওয়া হত। সময়ের বিবর্তনে তা শুধু কপালেই দেওয়া হয়। কারণ, কপাল চেতনার স্থান। কপাল ভাগ্যের স্থানও। তাই বোনেরা ভাইয়ের চেতনা এবং সৌভাগ্য কামনায় কড়ে আঙুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন। এমনটাই মনে করা হয়।

Hindu Bhai Dooj bhaifota
Advertisment