ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় বোনেরা সারাবছরের বিভিন্ন সময়ে নানান উৎসব পালন করে থাকেন। আর এইদিনে যমরাজের নজর থেকে ভাইদের জীবন সুন্দর এবং সুরক্ষাময় করতে ভাইফোঁটার উৎসব পালন করা হয়। শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি উপলক্ষে এইদিন সকালবেলা উপোস থেকে ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা এবং ভুরুতে কাজল দিয়ে পালিত হয় এই উৎসব।
একেকটি জায়গায় এর নাম ভিন্ন, পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা, মণিপুরে নিঙ্গল চাকুবা, নেপালে ভাইটিকা, গোয়া- মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকে ভাউবীজ। সকালে স্নান সারার পরেই আসনে বসিয়ে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ এবং মিষ্টির সহযোগে ভাই-এর দীর্ঘায়ু কামনা করেন বোনরা। তারপরেই থাকে নানানরকম পদের আয়োজন। অনেক অঞ্চলে এমন নিয়মও আছে চালের গুঁড়ো দিয়ে আল্পনা এঁকে তার মাঝে ভাইকে বসিয়েই কৃষ্ণ জ্ঞানে পূজা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই প্রতিপদে ফোঁটার নিয়ম পালন করে থাকেন। তারপরেও বেশিরভাগ উৎসব পালিত হয় দ্বিতীয়ার দিন।
ইতিহাস প্রসঙ্গে জানা যায়, জৈন ধর্মের প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের প্রয়াণের পর থেকেই তার একান্ত আপন সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন ভীষণ শোকে মুহ্যমান হন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন, অনশনে দিন কাটাতে থাকেন। তখন তার বোন অনুসুয়া ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় দিন তাঁকে রাজতিলক দিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে আসতে অনুরোধ করেন। বলেন, এইরকম বিষয় তাঁকে দিয়ে একেবারেই মানায় না। বোনের কথা শুনেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে জীবনের সত্যকে মেনে নেন তিনি।
আবার এমনও শোনা যায়, কৃষ্ণের অগ্রজ বলরামের সঙ্গে যমুনার বিয়ে হয়। বিবাহের দিন ছিল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিবাহের আগে ভাই যমের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয় সে। কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণ সহোদরা সুভদ্রার হাতে ফোঁটা নেন তাও নরকাসুরকে বধ করার পরেই। এই কারণেও হতে পারে ভাইফোঁটার চল। মন্ত্র উচ্চারণে, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা” - তাদের মঙ্গল হোক, উন্নতি হোক, বিপদ দূরে থাক এই কামনাই থাকে বোনের।
দেওয়া রইল সময় সূচিঃ
মদন গুপ্তের পঞ্জিকা অনুযায়ী: ৫ নভেম্বর রাত ১টা ১১ মিনিট থেকে , ৬ নভেম্বর রাত ১০টা ৫১ মিনিট।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী: তিথি শুরু- ৫ নভেম্বর রাত ১১ টা ১৪ মিনিট, এবং শেষ ৬ নভেম্বর সন্ধে ৭টা ৪৪ মিনিট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন