অসমের ভীমাশংকর জ্যোতির্লিঙ্গ। ভীমাসুরকে বধ করে ভক্তদের রক্ষা করতে এখানে শিব অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ডিপোর বিলের ঠিক পাশে পাহাড়ে এই জ্যোতির্লিঙ্গ। শিব পুরাণ এবং রুদ্র সংহিতা গ্রন্থের মতে, ডাকিনী পাহাড়ে রয়েছে ভীমাশংকর জ্যোতির্লিঙ্গ। গুয়াহাটির পামোহির কাছে এই ডাকিনী পাহাড়। যাকে স্থানীয় ভাষায় ডাইনি পাহাড় বলা হয়।
এখানকার বিশেষত্ব হল, কোনও মন্দির নেই। শিবলিঙ্গ রয়েছে। যে শিবলিঙ্গকে ঘিরে একটি পাহাড়ি ঝরনার স্রোত রয়েছে। সেই ঝরনার অবিচ্ছিন্ন ধারা শিবলিঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এই ধামের অর্ধেক পথে গণেশের একটি মন্দিরও রয়েছে। শিবলিঙ্গের দিকে যাওয়ার রাস্তায় পড়বে পাহাড়, বাঁশঝাড় এবং ঝরনা। যাতে, গোটা যাত্রাপথকে মনোরম করে তুলেছে। গ্রহের বাধা কাটানো এবং অকাল মৃত্যু রোধ করতে ভক্তরা এখানে শিবের পুজো দিতে আসেন।
শিবপুরাণ অনুসারে, লঙ্কাপতি রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ পটল লোকের রাজকন্যা করকতীর সঙ্গে প্রেম করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত করকতীর সঙ্গে কুম্ভকর্ণের বিয়ে হয়। তাদের ছেলেই হল ভীমাসুর। সে ব্রহ্মার থেকে বর পেয়ে ভগবান বিষ্ণুকে যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন। এতে অহংকারী হয়ে উঠে ভীমাসুর কামরূপেশ্বর প্রিয়ধর্মণ ও তাঁর স্ত্রী দক্ষিণাদেবীকে বন্দি করেছিল। কামরূপেশ্বর প্রিয়ধর্মন আবার ছিলেন শিবের উপাসক। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে কারাগারেও শিবের উপাসনা করতেন।
আরও পড়ুন- দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম, যুগ যুগ ধরে বাঙালির প্রিয় তীর্থভূমি
রক্ষীদের থেকে খবর পেয়ে ভীমাসুর কারাগারে শিবপূজন বন্ধ করতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল। কিন্তু, শিবের ক্রোধে সেই সেনা ধ্বংস হয়ে যায়। ভীমাসুর তখন নিজেই কারাগারে আসে। পূজা বন্ধ করাতে তরোয়াল দিয়ে কামরূপের রাজাকে হত্যা করতে যায়। কিন্তু, রাজার বদলে তরোয়ালের কোপ শিবের ওপর পড়ে। শিব তখন রুদ্ররূপ ধারণ করে ভীমাসুরকে হত্যা করে। শিবের শরীরের ঘাম থেকে নদী তৈরি হয়। সেই নদীই বর্তমানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে বয়ে যাচ্ছে। কথিত আছে, দেব-ঋষি এবং ভক্তদের অনুরোধে শিব এখানে ভীমাশংকর রূপে আজীবন বাস করতে রাজি হন।