Advertisment

ভূত-চতুর্দশীর আগে ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার গপ্পো টলিপাড়ার ছয় কন্যার

হাড়হিম করা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতাই শুধু নয়, ভূতের রাজার থেকে বরও চাইলেন ইন্দ্রাণী হালদার, নুসরত জাহান, অপরাজিতা আঢ্য। এঁদের মতোই ভূতুড়ে কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন টেলিভিশনের তিন কন্যা ঐন্দ্রিলা, দিতিপ্রিয়া ও ঊষসী রায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ghosts, ভূত

ভূত-চতুর্দশীর আগে তেনাদের নিয়েই নানান কাহিনী শোনালেন টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা। ছবি: পিক্সাবে।

"তারে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি।" আদ্যোপান্ত প্রেমের গান ঠিকই। কিন্তু তাঁদের সঙ্গেও বাঙালির প্রেম তো নেহাত কম কিছু নয়। তাঁরা ঠিক নয়, তেনারা। সেই তেনাদের চোখে দেখা যায় কিনা, সে নিয়ে তো অনেক যুক্তি তক্কো রয়েইছে। তবে তেনাদের নামে অনেক গল্প শুনেছে বাঙালি। বলা ভাল, এখনও তেনাদের নিয়ে কথা হলে ‘রাম রাম’ করতে করতেই বাঙালি কান খাড়া করে। ভূতে ভয় পান না, এমন বাঙালির সংখ্যাও নেহাতই কম। আবার অনেকেই গুপি-বাঘার ভূতের রাজার থেকে বর পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।

Advertisment

এবার ভূত-চতুর্দশীর আগে তেনাদের নিয়েই নানান কাহিনী শোনালেন টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা। হাড়হিম করা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতাই শুধু নয়, ভূতের রাজার থেকে বরও চাইলেন ইন্দ্রাণী হালদার, নুসরত জাহান, অপরাজিতা আঢ্য। এঁদের মতোই ভূতুড়ে কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন টেলিভিশনের তিন কন্যা ঐন্দ্রিলা, দিতিপ্রিয়া ও ঊষসী রায়।

ভূতের কথা শুনেই ভয় পেয়ে যান টেলিভিশনের ‘রানি রাসমণি’, থুড়ি দিতিপ্রিয়া রায়। শান্তিনিকেতনে গিয়ে গতবছর এক হাড়হিম করা ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ‘রানি মা’কে। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই দিতিপ্রিয়া বললেন, "গত বছর ‘রানি রাসমণি’-র প্রোমো শুটের জন্য শান্তিনিকেতন গিয়েছিলাম। যে হোটেলে উঠেছিলাম, সেখানে যা ঘটনা দেখেছি, তার মতো আর কিছু ঘটেনি।" এরপরই দিতিপ্রিয়া শোনালেন, "শান্তিনিকেতন পৌঁছেই ওই হোটেলে উঠি। হোটেলের ৮নং ঘরে উঠেছিলাম। হোটেলের ঘর কেমন তা দেখার জন্য আমিই একা আগে ঢুকেছিলাম। ঘর লাগোয়া একটা ব্যালকনি ছিল। সেই ব্যালকনির দরজা বন্ধ করা ছিল। ব্যালকনির দরজায় পর্দায় হাত দিতেই কে যেন বলে উঠল, 'দরজায় কেউ হাত দেবে না'।"

ghosts, ভূত ভূতে ভয় পান দিতিপ্রিয়া, ঐন্দ্রিলা ও ঊষসী। ছবি: ফেসবুক

এরপর ছোটপর্দার এই জনপ্রিয় মুখ আবার বলেন, "প্রথমে মনে হয়েছিল, হয়তো অন্য কোথাও কেউ কথা বলছেন। তাই পাত্তা দিইনি। এরপর আমরা কাছাকাছি এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। সেখান থেকে রাত ১০টার সময় ফিরে আসি। তখনও ওই দরজায় হাত দিতে ওই একই কথা শুনতে পাই। আমার সঙ্গে মা, মেক-আপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসার ছিলেন। ওঁরাও শুনতে পান। এরপর আর দরজা খুলিনি। কিন্তু সে রাতে ওই ঘরে ঘুমোতেই পারিনি। ওই ব্যালকনিতে কে যেন জুতো পরে খটখট করে হাঁটছিল। আলো জ্বালাতেই ওই আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল।"

আরও পড়ুন: দীপাবলিতে আলোর বাজারে ঘনিয়েছে অন্ধকার

দিতিপ্রিয়া একা নন, শান্তিনিকেতনের ওই হোটেলের অন্য ঘরে ছিলেন মেক-আপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসাররাও। সেই ঘরেও নাকি এমন আজব কাণ্ড ঘটেছিল। ওই টেলিকন্যা আরও বললেন, "ঘরের বাথরুমে হঠাৎ করেই শাওয়ার দিয়ে জল পড়ছিল। কেউ যেন জানলায় কড়া নাড়ছিল। সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"

indrani haldar, ইন্দ্রাণী হালদার ভূতের ভয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী হালদার। ছবি: ফেসবুক

শুটিং করতে গিয়ে গা ছমছম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন ইন্দ্রাণী হালদারও। এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। তিনি শোনালেন, "'অংশুমানের ছবি'-র শুটিং করতে বর্ধমান রাজবাড়িতে গিয়েছিলাম। অনেকদিন ওখানে শুটিং হয়েছিল। ওখানেই রাতে থাকতাম। যেখানে শুটিং হচ্ছিল, সেখানে কেমন গা ছমছম করত। ঘুমোচ্ছি, মনে হচ্ছে যেন কেউ একজন পাশে দাঁড়িয়ে আছে, সাংঘাতিক ভয় পেয়েছিলাম, তারপর তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালিয়েছিলাম।"

"ব্যাখ্যার বাইরে জীবনে অনেক কিছু হয়," একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন টলিপাড়ার হাইভোল্টেজ অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। ভূতের কথা বলতেই ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এর স্ত্রী বললেন, "তখন আমি মাধ্যমিক দেব। রাতে বাড়িতে একা পড়ছি। হঠাৎ যেন মনে হল, দরজা খুলে কেউ ঘরের মধ্যে ঢুকল, তারপর বাথরুমে জল ঢালল। ভাবলাম বাবাকে হাসপাতাল থেকে দেখে মা বাড়ি ফিরল। কিন্তু বেরিয়ে দেখলাম কেউ নেই। হঠাৎ হঠাৎ মনে হত, কেউ যেন পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া আমাদের ওপরের ঘরে প্রচুর বাসনপত্র রাখা ছিল। আওয়াজ পেতাম, কেউ যেন বাসন টেনে টেনে বার করছে। এটা প্রচন্ড হত, বাবা মারা যাওয়ার পর এসব বন্ধ হল।"

aparajita addhya, অপরাজিতা আঢ্য ভূতুড়ে কাণ্ড দেখেছেন অপরাজিতা আঢ্যও। ছবি: ফেসবুক

ভূতে মারাত্মক ভয় পান ‘ফাগুন বউ’-এর মহুল, থুড়ি ঐন্দ্রিলা। তিনি শোনালেন, "তখন অনেক ছোটো ছিলাম। আমার পাড়ায় একজন আত্মহত্যা করেছিলেন। প্রথমকদিকে ওঁর শ্রাদ্ধশান্তি করা হয় নি। সেসময় সন্ধের পর ওঁর বাড়ির পাশ থেকে একটা গন্ধ পেতাম। একবার বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলাম। হঠাৎ যেন মনে হল পিছন থেকে সাইকেলটা কেউ চেপে ধরেছে, চালাতে পারছি না। ৫-৭ সেকেন্ডের জন্য এটা মনে হয়েছিল। তারপর জ্বর জ্বর হয়েছিল।"

ভূত আছে কিনা, তা জানেন না টলিপাড়ার এই মুহূর্তের প্রথম সারির নায়িকা নুসরত জাহান। তাঁর বক্তব্য, "আমি লাকি যে কখনও এরকম কিছু বুঝিনি। ভূতের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটাই জানি না।" নুসরতের সঙ্গে একমত ছোটপর্দার বকুল, মানে ঊষসী রায়। শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি বললেন, "সত্যি কথা বলতে কী, আমার সঙ্গে এখনও ভয়ের কিছু ঘটেনি।" এই টেলিকন্যাকে নাকি ভূত সাহায্য করে! ঊষসী বললেন, "আমার জন্য ভূত ভাল হয়, ওরা সবসময় আমায় সাহায্য করে। যদিও ভূতের সিনেমা দেখতে বা গল্প পড়লে ভয় লাগে। তবে আগে যখন নাইট শুট হত, তখন অনেক সময় একা থাকতাম ফ্লোরে, কোনও কিছু ফিল করিনি। বরং মনে হয়েছে কেউ যেন আমায় সাহায্য করছে।"

nusrat jahan, নুসরত জাহান ভূতুড়ে কাণ্ড এখনও প্রত্যক্ষ করেননি নুসরত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আরও পড়ুন: ভাইফোঁটা নয়, এবার রূপান্তরকামীদের জন্য ‘বোনফোঁটা’

এ তো গেল ভূতুড়ে আড্ডা, যদি গুপি-বাঘার সেই ভূতের রাজা বর দিতে চান, তবে কী বর চাইবেন টালিগঞ্জের এই কন্যেরা? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন ইন্দ্রাণী। বললেন, "ভূতেরা বর দিতে চাইলে ভালবাসতে শুরু করব ভূতেদের। তবে চাইব যে পৃথিবীটা যেন আরও সুন্দর হয়। মানুষের মধ্যে থেকে কালো দিকটা যেন সরে যায়।" দিতিপ্রিয়া বললেন, "আমি বলব যে ভূত, তুমি না কোনওদিন এসো না আমার কাছে। এটা মজা করে বললাম। এটাই চাইব যে, আমি যেন ভাল মানুষ আর ভাল অভিনেত্রী হতে পারি।"

দিতিপ্রিয়ার মতোই ভূতকে কাছে টানতে নারাজ ঐন্দ্রিলা। ছোটপর্দার ‘মহুল’ হাসতে হাসতে বললেন, "ভূতেরা আমার থেকে দূরে থাকো, তাহলেই হবে, আমাকে দেখা দিতে হবে না, বোঝাতে হবে না তোমাদের অস্ত্বিত্ব।" বকুল আবার চান শিশু শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে। তবে তাঁর সাফ কথা, যে নিজের জন্য কিছু করে, তাকেই সাহায্য করবেন। সবাই যাতে নিরোগ থাকতে পারেন, সেই বরই চাইবেন বলে জানালেন অপরাজিতা। আর নুসরত বললেন, "যেখানে ইচ্ছে সেখানে চলে যেতে পারি, এরকম কিছু চাইব।"

tollywood Indrani Haldar
Advertisment