খিদিরপুরের ভূকৈলাস শিব মন্দির। এই মন্দির কার্ল মার্কস সরণিতে রয়েছে। রাস্তাটা বাবুবাজারের কাছেই। হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে বাসে চেপে খিদিরপুর যাওয়া যায়। ভূকৈলাস শিব মন্দিরের ঢোকার আগে রয়েছে বিশাল তোরণ। সেই তোরণ ধরে মাত্র ১০ কিলোমিটার হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে নহবতখানা। নহবতখানার মধ্যে প্রবেশ করলেই সামনে মূল মন্দির। যার চত্বরের সামনে বেশ বড় করে লেখা আছে ভূকৈলাস শিব মন্দির।
মূল মন্দিরের গেটের সামনে আসলেই চোখে পড়বে শিবগঙ্গা নামে এক পুকুর। এই পুকুরটি খনন করেছিলেন জয়নারায়ণ ঘোষাল। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে রাজা জয়নারায়ণ ঘোষাল এই খিদিরপুর এলাকায় ১০৮ বিঘা জমি কিনেছিলেন। সেই জমিতে তৈরি করেছিলেন তাঁর রাজবাড়ি। যা এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। পুকুরটির সামনে আবার জয়নারায়ণ ঘোষাল দুটি মন্দির তৈরি বানিয়েছিলেন। ডানদিকের মন্দিরটির নাম রক্তকমলেশ্বর। আর, বামদিকের মন্দিরটির নাম কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর মন্দির। এই দুই মন্দির তৈরি হয়েছিল বাংলার আটচালা স্থাপত্য রীতিতে।
কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ১৯৯৬ সালে এই মন্দির ও পুকুর সংস্কার করে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে। এখানে দুই মন্দিরের মধ্যে রয়েছে শিবের বাহন নন্দী। রক্তকমলেশ্বর মন্দিরের শিবলিঙ্গের উচ্চতা ১২ ফুট। আর, কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের শিবলিঙ্গের উচ্চতা ১৮ ফুট। এশিয়ার মধ্যে অন্যতম উচ্চতম শিলাবিশিষ্ট শিবলিঙ্গ রয়েছে এই মন্দিরে।
আরও পড়ুন- চুঁচুড়ার জাগ্রত সত্যময়ী কালী, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সাধক বামাক্ষ্যাপার হাত দিয়ে
শিবগঙ্গা পুকুরের চারপাশে জয়নারায়ণ ঘোষাল ৬টি দেবদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রয়েছে গণেশ, রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, হনুমানের মন্দির। এছাড়াও রয়েছে দেবী সরস্বতী, রাধাকৃষ্ণের মন্দির, হরপার্বতী-সহ ছয়টি মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এখানকার শিবমন্দিরগুলো অত্যন্ত জাগ্রত। বহু ভক্ত এই সব শিবমন্দিরে পুজো দিতে আসেন। শুধু তাই নয়, এই সব মন্দিরগুলোয় নিয়মিত পুজোপাঠও হয়ে থাকে। পুকুরটিরও নিয়মিত সংস্কার করা হয়। কারণ, তা কলকাতা পুরসভার নজরদারিতে রয়েছে। কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির।