জোরালো বিপদ থেকে উদ্ধার করেন মা বিপদতারিণী। সামাজিক জীবনে এমনটাই বিশ্বাস যে বিপদে মোক্ষদে দেবী - অর্থাৎ সমস্ত বিপদের নাশ করেন বিপদতারিনী। এই পুজো মানেই সকলের মধ্যে লাল রঙের তাগা পড়ার এক অদ্ভুত ঝোঁক সঙ্গে অবশ্যই নিয়ম মেনে তাতে ১৩ টা গিট - এবং ১৩ টি দূর্বা।
১৩ - নম্বরটির সঙ্গে এক অদ্ভুত যোগ রয়েছে বিপদতারিণী পুজোর। সবকিছুই এর ক্ষেত্রে ১৩ টি করে অর্পণ করতে হয়। কেউ কেউ মনে করেন দেবী মা দুর্গার রূপ আবার কেউ কেউ মা শীতলা রূপেই তাকে পুজো করেন। অনেকেই এই পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ মনস্কামনা করে থাকেন। নিয়ম মেনে পুজো করলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হতে বাধ্য।
সাধারণত আষাঢ়ে এই পুজোর ব্রত পালন করা হয়। রথ এবং উল্টো রথের মাঝে শনি মঙ্গলবার এটি করা হয়ে থাকে। এবছর আজ এবং ৫ তারিখ হবে এই ব্রত। এই পুজোর ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। কেউ বলেন মা দুর্গাই আসলে বিপদতারিণী। সমুদ্র মন্থনের সময় যে বিষ শিব নিজ কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন, তাতেও মহাদেবের শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিলেন দেবী দুর্গা। দেবীর সহযোগিতার মাধ্যমেই এই বিশ্বকে বাঁচিয়েছিলেন মহাদেব।আবার অনেকেই উদাহরণ দেন, শ্রী কৃষ্ণ বৃন্দাবন ধামে দেবী দুর্গার তাবিজ সঙ্গে রাখতেন। পৌরাণিক ইতিহাসে হাজারো বিপদ থেকে মানুষ থেকে দেবতাদের পাশে ত্রিশূলের মত অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা। তাই তাঁকে বিপদতারিণী নাম দেওয়া হয়।
পূজার নিয়ম কী?
- বিপদতারিণী পূজার নিয়ম অনুযায়ী সবকিছুর সঙ্গে ১৩ সংখ্যা আবশ্যিক। সে ফল হোক অথবা ফুল কিংবা প্রসাদের ক্ষেত্রেও। সাধারণত লাল রঙের পোশাক পরে এই পূজায় বসতে হয়।
- পুজো না হওয়া পর্যন্ত উপোস থাকা জরুরি। অনেকেই এইদিন অন্ন গ্রহণ করেন না। তারা লুচি কিংবা অন্য কিছুই প্রসাদ হিসেবে খান।
- ১৩টা ফল, সে নৈবেদ্য হিসেবে কেটে সাজিয়ে হোক অথবা গোটা হোক এটি দিতেই হবে। ১৩ রকমের ফুল অবশ্যই রাখতে হবে। ১৩ রকমের মিষ্টি - এই পুজোয় আবশ্যিক। এই পুজোর মূল আকর্ষণ লাল সুতোর ডুরি। এই ডুরিতে ১৩ টা গিট এবং ১৩ টি দূর্বা বাঁধা হয়। ছেলেমেয়েরা অনেকেই সারাবছর এটিকে সঙ্গে রাখেন। কেউ কেউ হাতে পড়েও থাকেন। মেয়েদের বাম হাতে এবং ছেলেদের ডান হাতে এটি বেঁধে দিতে হয়।
আরও পড়ুন < জগন্নাথদেবের রান্নাঘর, কেমন সেই রন্ধনশালা, কী ভোগ তৈরি হয় মহাপ্রভুর জন্য? >
যে যে নিয়ম মানতে হয় অবশ্যই :-
- এইদিন, বাস্তুতে মাটি খোঁড়া কিংবা আঘাত করা উচিত নয়। এতে বসুমাতা রুষ্ট হন।
- অনেকেই ১৩ টি করে সামগ্রী নিয়ে, গঙ্গার পাড়ে কিংবা মন্দিরে দান করে থাকেন এগুলি করাও বেশ ভাল।
- পুজোর সময় কুরুচিকর কথা, কিংবা মহিলাদের আঘাত করা উচিত নয়। এমনকি মহিলাদের সঙ্গে খারাপভাবে কথাও বলতে নেই। সাধারণত বংশ পরম্পরায় বাড়ির সকলে এই পুজোয় অংশ নেন। বাড়ির মা বউরা নিষ্ঠা মেনে এই পুজোর ব্রত পালন করে থাকেন, তাই নারীদের অবমাননা দেবী একেবারেই পছন্দ করেন না।
- ধূমপান এবং মদ্যপান একেবারেই করা ঠিক নয়। এবং মিষ্টি জাতীয় কিছুই বাড়ি থেকে এদিন বের করতে নেই।
- নারকেল বিশেষ করে, অথবা যে ডাব পুজোয় ব্যবহার করেছেন সেটি আজকের দিনে গঙ্গায় ভাসাবেন না।
- এমনকি, ডুরি অথবা তাগা এদিকে ওদিকে ফেলে রাখা একেবারেই ঠিক নয়। একবছর পর সেটিকে গঙ্গায় তর্পণ করুন।