শাস্ত্র মতে দেবী দুর্গাকে বলা হয় বিপদনাশিনী। তাঁরই রূপ হলেন বিপত্তারিণী। প্রতিবছর আষাঢ় মাসে রথযাত্রা আর উল্টোরথের মধ্যে মঙ্গল ও শনিবার বিপত্তারিণী ব্রত পালিত হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী বলতে গেলে, আষাঢ় মাসের শুক্লা তৃতীয় থেকে নবমী তিথির মধ্যে শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই ব্রত পালিত হয়।
বহু জায়গায় এই পুজো চলে চার দিন ধরে। প্রথম দিন দেবীর আরাধনা হয়। মহিলাদের দণ্ডী কাটতে দেখা যায়। তারপর দুই রাত ধরে বাংলা লোকগীতি, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিন হয় বিপত্তারিণীর বিসর্জন। এই চার দিনের মধ্যে ২০২২ এ ২ জুলাই শনিবার পড়েছিল বিপত্তারিণী ব্রত। ফের ৫ জুলাই, মঙ্গলবার এই ব্রতের দিন পড়েছে। একবার এই ব্রত শুরু করলে তিন, পাঁচ অথবা ন'বছর পালন করা উচিত বলেই মনে করেন শাস্ত্রজ্ঞরা।
পুরাণে আবার দেবীকে কৌষিকীও বলা হয়। বিপত্তারিণীর উৎপত্তি হয়েছিল ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কোষিকা থেকে। তাই দেবীকে কৌষিকী বলা হয়। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে, শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরের হাতে পরাজিত দেবতারা হিমালয়ে মহাদেবীর আরাধনা করছিলেন। সেই আরাধনায় দেবী পার্বতীর শরীর থেকে তাঁর মতনই দেখতে অন্য এক দেবী বেরিয়ে আসেন। তিনিই হলেন দেবী বিপত্তারিণী।
আরও পড়ুন- রহস্যময় শিবমন্দির, আজও যার রহস্য ভেদের চেষ্টা চলছে অবিরত
পুরাণ অনুযায়ী, দেবর্ষি নারদকে মহাদেব বলেছিলেন যে বিপত্তারিণী ব্রত পালন করলে নারীকে বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। মামলা, মোকদ্দমা, বিরহ যন্ত্রণা, অর্থসংকট থেকে মুক্তি মেলে। মার্কণ্ডেয় মুনির মতে, এই ব্রতের ফলে দীর্ঘজীবন, বৈভবলাভ ও সব বিপদ থেকে মুক্তি মেলে।
এই ব্রত পালন করতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হয়। ব্রতের আগের দিন নিরামিষ আহার বা হবিষ্যান্ন খেতে হয়। পুরোহিতকে দিয়ে ঘট স্থাপন করিয়ে হলুদ সুতো দিয়ে দুর্বা-সহ ঘটের মুখ বাঁধতে হয়। তার পর স্বস্তিবাচন, অঙ্গশুদ্ধি, করশুদ্ধি, পঞ্চদেবতার পুজো দিয়ে বিপত্তারিণী দুর্গার পুজো করতে হয়। করতে হয় সংকল্প। এই পুজোর জন্য লাগে এক শিষওয়ালা ডাব, নৈবেদ্য, ১৩ রকমের ফুল, ফল, ১৩ গাছি লালসুতো, ১৩টি দুর্বা, ১৩টি পান, ১৩টি সুপারি, ১৩টি পৈতে, ১৩টি লবঙ্গ, ১৩টি ছোট এলাচ, ১৩টি বড় এলাচ। পুজোর শেষে ব্রতকথা শুনতে হয়।