ভারতীয় অধ্যাত্মবিদ্যাকে দর্শনের চিন্তাধারা ফুল ও ফলে ভরিয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে ভারতীয় অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের শাখাকে সুসংহত রূপ দিয়েছিলেন আদি শংকরাচার্য। যে দর্শনের মূল বিষয়বস্ত আত্মা ও ব্রহ্মের মিলন। আর, ব্রহ্ম হল পরব্রহ্ম, যা নির্গুণ। নিজের দর্শনের এই চিন্তা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর আগে দর্শনের মীমাংসা শাখা আনুষ্ঠানিকতায় বেশি জোর দিত। সন্ন্যাসের আদর্শকে উপহাস করত। তার বিপরীতে গিয়ে শংকরাচার্য বোঝান, জগৎ মিথ্যা ও মায়াময়। আর ব্রহ্মই সত্য।
তাঁর দর্শন বিশুদ্ধ অদ্বৈতবাদ, কেবল অদ্বৈতবাদ, বিবর্তনবাদ, মায়াবাদ, অনির্বাচ্যবাদ এবং নির্বিশেষবাদ রূপে পরিচিত। আর, এই সব মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সাংখ্য বিবর্তনবাদ, বৌদ্ধ ক্ষণিকত্ববাদ, জৈন স্যাৎবাদ, বৈশেষিক পরমাণুবাদের মত নানা মতবাদ খণ্ডন করেন। অদ্বৈত বেদান্তের সিদ্ধান্তকে পূর্ণরূপ দিতে ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুন্ডক, মান্ডূক্য, ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদের ভাষ্য, গীতা ভাষ্য, বিষ্ণু সহস্রনাম ভাষ্যগ্রন্থ রচনা করেন। আত্মবোধ, বিবেকচূড়ামনি, উপদেশসাহস্রী গ্রন্থ রচনা করেন।
হিন্দু ধর্মের পদপ্রদর্শক হিসেবে তিনি চারটি মঠ স্থাপন করেন। তার মধ্যে দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে ওড়িশায় গোবর্ধন মঠ এবং উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠে জ্যোতির্মঠ। এই চার মঠের দায়িত্ব তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন সুরেশ্বরাচার্য, হস্তামলকাচার্য, পদ্মপাদাচার্য ও তোটকাচার্যকে। সেই থেকে এই চার মঠের প্রধান শংকরাচার্য নামে পরিচিতি লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি অষ্টাদশ মহাশক্তিপীঠের মাহাত্ম্যও প্রচার করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের দশনামী সম্প্রদায় এবং সন্মত নামে হিন্দু পূজাপদ্ধতিরও প্রচলন করেছিলেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত বহু প্রাচীন মন্দির, যার সৃষ্টিকাহিনি রয়েছে পুরাণেও
শংকরাচার্য কেরলের কালাডি গ্রামে ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার নাম ছিল শিবগুরু। মায়ের নাম ছিল আর্যাম্বা। আর্দ্রা নক্ষত্রের বিশেষ তিথিতে তাঁর জন্ম হয়। তিনি যখন খুব ছোট, সেই সময়ই তাঁর বাবা মারা যান। মাত্র আট বছর বয়সে শংকরাচার্য চারটি বেদ আয়ত্ত করে নেন। আর, আচার্য গোবিন্দপাদের কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। আচার্যের তত্ত্বাবধানে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বেদ ও উপনিষদ এবং ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রয়াত হন।