আগামিকাল থেকে শুরু বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার। আপনি কি গত দু সপ্তাহ একাই রাত জেগে বাড়ির টিভি-তে মেসি-রোনাল্ডোদের দেখেছেন? এরকমটাও নিশ্চয়ই হয়েছে যে এক-আধবার চোখও লেগে এসেছে খেলা দেখতে-দেখতে? কখনও বা একঘেয়েমি থাবা বসিয়েছে আপনার নিশিযাপনে। তাই তো? শহরের দক্ষিণেই পাবেন মুশকিল আসানের রাস্তাটা। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোয় কিন্তু খেলা দেখার অভিজ্ঞতা বদলাতেই পারেন। সৌজন্যে কতিপয় স্পোর্টস কাফে।
দেশের অনান্য মেট্রো সিটির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ফুটবল পাগল এই শহরেও গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি স্পোর্টস কাফে। যেখানে আপনি কাউচে পিঠ এলিয়ে হুক্কায় টান দিয়ে শহরের ফুটবল ফ্যানাটিকদের ভিড়ে মিশে যেতে পারেন। জায়েন্ট স্ক্রিনে চোখ রাখলে মনে হতেই পারে, আপনি লুঝনিকিতে চলে এসেছেন। এবং শুধু খেলাই নয়। সাধ্যের মধ্যেই থাকছে খানা-পিনারও এলাহি আয়োজন। রাশিয়াতে গিয়ে খেলা দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিতে পারে এই স্পোর্টস লাউঞ্জগুলি।
ফুটবল ফিভারে কাঁপছে সিটি অফ জয়। সেই উত্তাপে গা সেঁকছে বিজে’স স্পোর্টস রেস্তোরাঁ কাম লাউঞ্জ, এবং ম্য়াভেরিকস কাফে। দু’টোর ঠিকানাই দক্ষিণ কলকাতা। কেয়ার অফ শরৎ বোস রোড, বা ল্যান্সডাউন। বছর দুয়েক হয়েছে কলকাতায় জন্ম নিয়েছে বিজে’স স্পোর্টস রেস্তোরাঁ কাম লাউঞ্জ। বিশ্বকাপ বলেই নয়, আইপিএল থেকে শুরু করে এল-ক্লাসিকো, কলকাতায় খেলা দেখার বিশ্বস্ত ঠেক হয়ে উঠেছে এই লাউঞ্জ। বিশ্বকাপের জন্য খোলা থাকছে সকাল এগারোটা থেকে রাত তিনটে পর্যন্ত। বিজে’স-এর ইনচার্জ মণি বিশ্বাস বলছেন, "রিয়াল-বার্সার ম্যাচ থাকলে এক সপ্তাহ আগে থেকে বুকিং শুরু হয়ে যায়। এমনকি মেঝেতে বসেও অনেকে খেলা দেখেন। বিশ্বকাপেও প্রচুর ফুটবল ফ্যানেরা আসছেন। মূলত ফ্যামিলি ক্রাউড এখানে আসে। ফ্লাইংয়ের তুলনায় রেগুলার কাস্টোমারই বেশি।"
আরও পড়ুন: গোর্কি সদনে ফুটবল ফিয়েস্তা, সৌজন্যে মিলি দ্রুগ
বিজে’স-এর খাবারের মধ্যে কাবাবের বৈচিত্র্যই সবচেয়ে বেশি। তন্দুরি থেকে টেংরি কাবাব হয়ে চেলো। এসবই রয়েছে তাদের সম্ভারে। মণি বলছেন, স্টার্টার, মেইন কোর্স, ডেজার্ট এবং ড্রিংক্স মিলিয়ে দু’জনের ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে মন ভরে যাবে। তাঁর দাবি, এই শহরে এরকম স্পোর্টস লাউঞ্জ খুবই কম। যেখানে এসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতাটাই আলাদা। খাবারের গুণগত মানের সঙ্গেই সাধ্যের মধ্যে দাম, এটাই তাদের ইউএসপি।
মাত্র দু’মাস বয়স ম্য়াভেরিকস কাফের। ইতিমধ্যেই টিনেজারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ল্যান্সডাউনের এই ডেস্টিনেশন। ম্যাভেরিকসের কর্ণধার করণ শাহ নিজে প্রতিদিন নিয়ম করে দু’বেলা ফুটবল খেলেন। ফুটবল অন্ত প্রাণ। চলতি বিশ্বকাপে তিনি গলা ফাটাচ্ছেন কিলিয়ান এম'বাপের জন্য। চাইছেন ফ্রান্সের হাতে উঠুক ট্রফি। ফেসবুকে আর্সেনাল, বার্সেলোনা, চেলসি ও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফ্যান পেজে রয়েছেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝেন যে, কলকাতার ফুটবল পাগলরা এক ছাতের তলায় আসতে চাইছেন কোনও কাফের হাত ধরেই। সেই ভাবনা থেকেই এই কাফের জন্ম।
করণ বলছেন, "আমরা ১৯৯ টাকায় হুক্কার কম্বো এনেছি। দু’টো স্টার্টার, দু’টো মকটেল, একটা মেইন কোর্স আর একটা ডেজার্ট মিলিয়ে মাত্র ৬৯৯ টাকায় পাওয়া যাবে ইন্ডিয়ান প্ল্যাটার।" এখানে যদিও সবটাই নিরামিষ, তবুও খাবারের মধ্যে রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। টলি তারকারাও ঢুঁ মেরে যান সময় পেলে। গ্রিন ম্যাঙ্গো অ্যান্ড পাপায়া সালাড এবং বার্ন্ট গার্লিক সিলান্ত্রো রাইস তাদের হটকেক। কাটিং টি’র জন্যও অনেকেই আসেন এখানে। ম্যাভেরিকসে শুধু জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপ দেখাই নয়, প্লে-স্টেশনে খেলার সুযোগও থাকছে। রয়েছে বোর্ড গেমস এবং বইও।
এই দুই স্পোর্টস কাফের অন্দরসজ্জা আপনার চোখ টানবেই। বার্সা-রিয়াল, ম্যান ইউ-চেলসির মতো ক্লাবের নাম দেওয়া এলইডি-লাইটে সাজানো সিঁড়ি বেয়েই উঠে যাবেন কাফেতে। মনে হতেই পারে যেন টানেল পেরিয়ে মাঠ। ভিতরে বিভিন্ন দেশের পতাকা আর মেসি-রোনাল্ডোর দেওয়াল জোড়া ওয়ালপেপার আপনার ফ্যান সত্ত্বায় আরও বেশি ইন্ধন জোগাবে। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোর জন্য এই দুই কাফে হতেই পারে আপনার পরের স্টেশন।