এরাজ্যে জাগ্রত প্রতিমার সংখ্যা নেহাত কম নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। যে মন্দিরগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনি। সোজা কথায়, এমন সব কাহিনি- যার কোনও ব্যাখ্যা সাধারণ ভাবে হয় না। এমনই এক মন্দির রয়েছে রাজ্যের অন্যতম জেলা বর্ধমানে। যে মন্দিরের প্রতিমায় বেলকাটা ফোঁটানোয় বেরিয়ে এসেছিল রক্ত। সেই অলৌকিক কাণ্ড করে সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন সাধক কমলাকান্ত। আর, এমন অজস্র অলৌকিক ঘটনার জেরে এই মন্দির সাধক কমলাকান্তের কালীবাড়ি নামে জনসাধারণের কাছে একডাকে পরিচিত।
কী সেই অন্যান্য অজস্র অলৌকিক কাহিনি? কথিত আছে, সাধক কমলাকান্ত এক অমাবস্যার দিনে বর্ধমানের মহারাজাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়েছিলেন। সাধক কমলাকান্তের মৃত্যুর সময়ও দেখা গিয়েছিল এমন অলৌকিক ঘটনা। মৃত্যুর সময় গঙ্গার স্পর্শ অনেকেই করতে চান। সাধক কমলাকান্ত গঙ্গায় যেতে চাননি। তখন দেখা গিয়েছিল, এই কালীবাড়ির মাটি ফুঁড়ে আচমকা উঠে এসেছিল জল। যা আসলে গঙ্গা বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। সেই জল যে স্থান থেকে উঠে এসেছিল, তাকে কুয়োর মত বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে কমলাকান্তের কালীবাড়িতে।
কথিত আছে বর্ধমানের অম্বিকা কালনার বিদ্যাবাগীশ পাড়ায়। কমলাকান্তের বাবার নাম ছিল মহেশ্বর ভট্টাচার্য। মায়ের নাম ছিল মহামায়া দেবী। শৈশবে পিতৃহারা হয়েছিলেন কমলাকান্ত। মায়ের সঙ্গে তিনি চলে এসেছিলেন বর্ধমানের গলসির ২ নম্বর ব্লকের চান্না গ্রামে। গ্রামেরই টোলে কমলাকান্ত লেখাপড়া করেছিলেন। লেখাপড়ায় ভালো হওয়ার সুবাধে পরবর্তীতে একটি টোলের শিক্ষকের দায়িত্বও পান। চান্না গ্রামে বিশালাক্ষী মন্দিরের পাশে পঞ্চমুণ্ডির আসনে কমলাকান্ত সিদ্ধিলাভ করেন বলেই কথিত রয়েছে।
আরও পড়ুন- চান্না থেকে রাজগঞ্জ, বর্ধমানের নানা জায়গায় ছড়িয়ে সাধক কমলাকান্তের লীলাক্ষেত্র
আরও পড়ুন- ৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত রটন্তী কালী মন্দির, জাগ্রত দেবী ভরসা ভক্তদের
বাংলার ১২১৬ সালে বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদ বাহাদুর সাধক কমলাকান্তকে সভাপণ্ডিত নিযুক্ত করেন। এরপরই কমলাকান্ত বোরহাটে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে কমলাকান্ত কালীমন্দিরের যেখানে দেবীপ্রতিমার বেদী রয়েছে, সেই বেদীর নীচেই রয়েছে সাধক কমলাকান্তের সমাধি। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা তেজচাঁদ বাহাদুর। তারপর থেকে এই মন্দিরেই দেবীর সাধনা নতুন করে শুরু করেছিলেন কমলাকান্ত। দেবীমূর্তির পাশেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই পঞ্চমু্ণ্ডির আসনের কাছে সাধারণত পুরোহিত ছাড়া আজও কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। এখানে রয়েছে সাধক কমলাকান্তের প্রতিষ্ঠিত কালভৈরব শিব।
পাশাপাশি, এই মন্দিরে রয়েছে নর্মদেশ্বর শিব। যাঁরা সেই শিবলিঙ্গের ছবি তোলেন, তাঁদের ছবিতে শিবলিঙ্গের সঙ্গেই নাকি এক আবছা রক্তমাখা খাঁড়ার ছবি ওঠে। যদিও বাস্তবে শিবলিঙ্গের পাশে কোনও রক্তমাখা খাঁড়া থাকে না। এমনটাই দাবি ভক্তদের।