দেখে মনে হবে, গ্রামের কোনও স্কুল। অথবা, খেতের মধ্যে কোনও কৃষকের বাড়ি। আদপে তা নয়। এটা বৌমারি শীতলা মন্দির। নতুন গজিয়ে ওঠা নয়। বহু পুরোনো এক মন্দির। যাকে ঘিরে আছে অজস্র অলৌকিক কাহিনি। গ্রামবাসীরা ভয় আর ভক্তির চোখে এই মন্দিরকে দেখেন। পাশের রাস্তার সংস্কার করেন। কাছে পুকুর আছে। সেই পুকুরেরও সংস্কার করান। তবে, মন্দিরের বিশেষ সংস্কারে তাঁরা ভয় পান। ভয় একটাই, যদি দেবী রুষ্ট হন!
গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন এই মন্দিরের দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তিনি মানুষের বেশে ভক্তদের পাশেও দাঁড়ান। এই মন্দিরের পাশেই আছে একটা বাড়ি। আগে দূরের কোনও লোকজন, এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় রাত হলে ওই বাড়িতে আশ্রয় নিতেন। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, সেই সময় শীতলা দেবী এক বৃদ্ধার চেহারায় ধরা দিতেন। তিনি পুকুর থেকে মাছ ধরে রান্না করতেন। আর, মাতৃস্নেহে মন্দিরের পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া লোকেদের খাওয়াতেন। শুধু এটাই নয়। এই মন্দির ঘিরে এমন বহু অলৌকিক কাহিনির কথা গ্রামবাসীরা জানেন।
সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল এই মন্দিরের পাশের পুকুরটিকে ঘিরে। এক নববধূ পালকিতে চেপে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। পুকুরের পাশে বড় আকারের গাছ রয়েছে। যার তলায় পথিকরা বিশ্রাম নিতেন। কথিত আছে, বেয়ারারা পালকি থামিয়ে ওই গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আর নববধূ পাশে পুকুর থেকে জল পান করছিলেন। সেই পুকুর থেকেই আশপাশের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা পানীয় জল সংগ্রহ করতেন। ওই নববধূ সেই জলে মূত্রত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন- বাঙাল-ঘটির চরম টানাপোড়েন, মেধস ঋষির আসল আশ্রমটা কোথায় জানেন?
আচমকা দেখা যায়, দুটো সরু তার জলের তল থেকে উঠে এসে ওই নববধূর পা পেঁচিয়ে ধরেছে। তাঁকে পুকুরের ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নবববধূর চিৎকারে পালকির বাহকরা ছুটে আসেন। তাঁরা তার দুটো ওই নববধূর পা থেকে খোলার চেষ্টা করেন। পালকি বাহকরা আশপাশের বাসিন্দাদেরও ডেকে আনেন। তাঁরাও ওই তারদুটো কাটার চেষ্টা করেন। ভিড় জমে যায় ওই পুকুর ঘিরে। আচমকা দেখা যায়, ওই তার দুটো বড় হয়ে যাচ্ছে। তা রূপ নেয় মোটা শিকলের। উপস্থিত সকলের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সেই শিকল ওই নববধূকে পুকুরের গভীরে টেনে নিয়ে যায়।
গ্রামবাসীরা জলে ডুব দিয়ে, জাল ফেলে- নানাভাবে ওই নববধূকে পুকুর থেকে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাঁর খোঁজ মেলেনি। পরদিন পুকুরে ওই নববধূর দেহ ভাসতে দেখা যায়। সেই থেকে জায়গাটির নাম হয়ে যায় বৌমারি। বর্তমানে প্রায় সারাবছরই এই মন্দিরে অন্নভোগ চলে। পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া এবং পৌষ সংক্রান্তিতে এই মন্দিরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সময় এই মন্দির ঘিরে প্রায় একসপ্তাহ ধরে মেলা চলে।