বঙ্গদেশ বা বাংলায় দেবী মহাশক্তি কালিকা বা কালী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এরাজ্যের অলিগলিতে কালীমন্দির বা কালী আরাধনা তাই দীর্ঘদিনের রীতি। জেলা হুগলিও এই রীতির ব্যতিক্রম থাকেনি। হুগলির গঙ্গা তীরবর্তী দ্বীপ বা দহ হিসেবে অতীত থেকেই পরিচিত ছিল ডুমুরদহ।
এই অঞ্চলেই রয়েছে অতি প্রাচীন এক কালী মন্দির। যার বিগ্রহকে ভক্তরা ডাকেন বুনো কালী নামে। অতি সাদামাটা এক মন্দির। দেখতে পিরামিডের মত একতলা, তবে চারচালা। এই মন্দির বারবার সংস্কার হয়েছে। তাই স্থাপত্যেও রয়েছে আধুনিকতার ছাপ। কিন্তু, ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে এই মন্দির অতি প্রাচীন।
একটা সময় এই মন্দিরের খুব খ্যাতি ছিল। আর, তা বিশে ডাকাতের জন্য। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই বিশে ডাকাতকে সামলাতে হিমশিম খেতেন ইংরেজ শাসকরা। সেই সময় বিশে ছিল ইংরেজ শাসকদের কাছে এক ত্রাস। কথিত আছে, বিশে ডাকাতের দলবল নৌকোয় চেপে যশোহরে গিয়ে পর্যন্ত ডাকাতি করত। আর, এই মন্দিরে পুজো দিয়েই তারা যেত ডাকাতি করতে। তবে, সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ জানত না যে এই বিশে ডাকাত আর কেউ নয়। সে আসলে খোদ ডুমুরদহেরই জমিদার বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- শেরশাহর যুগের পুজো, জাগ্রত দেবীর কাছে কামনা পূরণে দূর থেকে আসেন ভক্তরা
এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, অতীতে এখানে শাক্তমতে পুজো-আরাধনা হত। পরবর্তী সময়ে শুরু হয় বৈষ্ণব মতে পুজোপাঠ। তবে, আজও এখানে মানত পূরণ করতে ছাগল বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। ভক্তদের দাবি, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। মানত করলে, তা পূরণ হয়। শুধু তাই নয়, এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে চারচালা ভৈরব মন্দির।
দেবীর ভৈরবও অত্যন্ত জাগ্রত। অবশ্য ভৈরব মন্দিরের অবস্থা ততটা ভালো নয়। কিন্তু, তার টেরাকোটার কাজ মনে করিয়ে দেয় যে ওই মন্দিরও অতি প্রাচীন। ভক্তরা অনেকে এই ভৈরবের মন্দিরেও মানত করে থাকেন। একটা সময় এই অঞ্চলটা ছিল জঙ্গলে ভরা। সেই থেকেই দেবীর নাম বুনোকালী বলে দাবি ইতিহাসবিদদের।