প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে চাণক্য এক উজ্জ্বল নাম। তাঁর 'নীতি দর্শন' নামে এক গ্রন্থের কথা শোনা যায়। যা পড়লে আমাদের দৈনন্দিন জীবনচর্চাকে আরও সুন্দর ও শোভন করা সম্ভব। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকেও চাণক্য যে কতটা প্রাসঙ্গিক, তাঁর নীতিবাক্যগুলো পড়লেই তা বোঝা যায়। বর্তমানে জীবন অনেক বেশি জটিল। কিন্তু, তারপরও আমাদের জীবনচর্চায় চাণক্যের শ্লোকগুলোর গুরুত্ব একচুলও কমেনি।
এমনই একটি বিষয় হল বর্তমান সময়ের লেখাপড়া। সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় থাকেন পরিবারের লোকজন। সন্তান বড় হয়ে কী করবে, না-করবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বহু মা-বাবারই রাতে ঘুম হয় না। বহু ছেলে-মেয়ে আবার চাকরির জগৎ আর পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে লেখাপড়া কমিয়ে দেয়। বরং, রাজনীতি অথবা অন্যান্য ক্ষেত্রে মন দেয়।
এই সব ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের উচিত সন্তানকে চাণক্যর এই নির্দিষ্ট নীতিবাক্য শিক্ষা দেওয়া। আর, সেই নীতিবাক্য হল- 'বিদ্বত্ত্বং নৃপত্বং চ নৈব তুল্যং কদাচন। স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান্ সর্বত্র পূজ্যতে।' যার বঙ্গানুবাদ করলে হয়- বিদ্বান ব্যক্তি ও রাজা কখনও সমান হতে পারে না। রাজা স্বদেশে সম্মান পান। কিন্তু, বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র সম্মান পান।
এই নীতিবাক্যটিকে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তবে সেটা হবে- বিদ্যা হল জীবনের এক অতুলনীয় সম্পদ। বিদ্যার সঙ্গে অন্য কোনও কিছুর তুলনা করা চলে না বা হয় না। আমরা দেখি সমাজে ও সংসারে রাজা বা জনপ্রতিনিধিদের স্থান অনেক ওপরে। কারণ, তাঁরা রাজধর্ম পালন করে জনসাধারণকে রক্ষা করেন।
জনগণের সুখ-সুবিধা, ভালো-মন্দ, সবকিছু দেখাই জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব ও কর্তব্য। জনপ্রতিনিধি যদি তাঁর কর্তব্য ঠিকমতো পালন করতে পারেন, তাহলে জনগণও তাঁকে সম্মান জানাবে। মুখ মুখে সেই জনপ্রতিনিধির নাম ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ তাঁর নামে জয়ধ্বনি দেবে। সেই জনপ্রতিনিধির জয়গান হয়তো অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন- রাত পোহালেই রাস, কী এই উৎসব, কী-ই বা তার পটভূমি?
কিন্তু, বিদ্বান ব্যক্তি! তাঁর সুখ্যাতি দেশের মধ্যে ছড়িয়ে তো পড়েই। শুধু তাই না। আশপাশের রাজ্যেও প্রকৃত বিদ্বানের সুখ্যাতি হয়। তাঁকে সবাই সম্মান জানায়। শুধু তাই নয়। বিদেশেও একজন বিদ্বান ব্যক্তির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দেশ, কাল সীমানার গন্ডি পেরিয়ে বিদ্বানের খ্যাতি সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিদ্বানকে মানুষ সম্মান দেয়, পুজো করে।
প্রকৃত বিদ্বানকে গোটা বিশ্ব সারাজীবন মনে রাখে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে নানা সময় কত শাসকই না ক্ষমতায় থেকেছেন। কিন্তু, তাঁদের কতজনকে মানুষ মনে রেখেছে? কিন্তু, প্রকৃত বিদ্বান ব্যক্তি যিনি তাঁর যোগ্যতা দিয়ে জীবনে নিদর্শন রেখে গিয়েছেন, তিনি কিন্তু মানুষের জীবনে চিরকালীন আসন তৈরি করে ফেলেছেন।