Advertisment

কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আরেক নাম ক্যাফে পজিটিভ

পাঁচটা এলাহি ক্যাফের তুলনায় বেশ সাধারণ। তবে অনন্য। এই ক্যাফের দায়িত্বে রয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ তরুণী। রীতিমত দক্ষভাবে সামলাচ্ছেন সবটা। এইচআইভিতে আক্রান্ত তাঁরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
HIV positive cafe at jodhpur park Express photo Shashi Ghosh

ক্যাফে পজিটিভ। ছবি: শশী ঘোষ

এইচআইভি পজেটিভ যাঁরা, সর্বসমক্ষে তাঁদের ছবি বা নাম ব্যবহার করা যায়না ঠিকই, তবে তাঁদের বানানো কফিতে কিন্তু চুমুক দেওয়া যায় অনায়াসেই। আঁতকে উঠবেন হয়ত অনেকেই। কারণ এইচআইভি পজিটিভ কথাটা শুনলেই অচ্ছুত, ব্রাত্য এমন হাজারো প্রতিশব্দ আজও ভিড় করে একদল মানুষের মনে। আর এই ভিড়ের বিরুদ্ধেই অহরহ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একদল মানুষ।

Advertisment

দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক বাজারে ঢুকে কিছুটা এগোলেই ১২০ স্কোয়ার ফুটের কফি শপ, 'ক্যাফে পজিটিভ'। আর পাঁচটা ঝাঁ-চকচকে ক্যাফের তুলনায় বেশ সাধারণ। তবে অনন্য। এই ক্যাফের দায়িত্বে রয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ তরুণী। রীতিমতো দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন সবটা। এইচআইভি-তে আক্রান্ত তাঁরা। তবে একরাশ স্বপ্ন দেখছে ওই কয়েক জোড়া চোখ। ওঁদের ক্যাফেও জনপ্রিয়তার শিখর ছোঁবে একদিন। হাসতে হাসতে এমনটাই জানালেন ক্যাফের দায়িত্বে থাকা এক তরুণী।

publive-image ওরা কাজ করে। ছবি: শশী ঘোষ

এখানে দুটো শিফটে, দুটো দলে কাজ চলে রোজ। একদল যখন এদিকে ক্যাফে সামলায়, অন্য দল তখন ব্যস্ত পড়াশোনা এবং বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং-এ। কেউ মাধ্যমিকের বাধ্য পড়ুয়া, কেউ আবার উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন সদ্য। "হবি কী?" জিজ্ঞেস করতেই উত্তর এল শো'কেসের ওদিক থেকেই, "গল্প পড়তে ভালবাসি।" কেউ বললেন নাচ, কেউ জানালেন গিটারের সখের কথা। সব মিলিয়ে আর বাকি পাঁচজনের মতো জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা স্পষ্ট ফুটে উঠছিল ওঁদের চোখেমুখে।

Hiv Positive Cafe Express photo Shashi GhoshCafe positive-6110-007 ক্যাফে পজেটিভের ব্লু-বেরি মাফিন। ছবি: শশী ঘোষ

সংস্থার কর্ণধার কল্লোল ঘোষ। জানালেন, এই ক্যাফের পুরোটাই পরিচালনা করছেন দশজনের একটা টিম। প্রাথমিক ভাবে সবাই কিছুদিন সাহায্য করলেও পরবর্তী সম্পূর্ণ দায়িত্বটাই সামলাবেন ওঁরা। এখান থেকে যা উপার্জন হবে সবটাই ওঁদের। তাই কোনও বানিজ্যিক স্বার্থ থাকছে না অন্যদের। ইতিমধ্যেই সাজিয়ে ফেলা হয়েছে ক্যাফের ইন্টিরিয়ার। কেউ ফ্রিজ দিয়েছেন, কেউ মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কেউ বা এসি, কেউ আবার আসবাব দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন। সাহায্যের হাত এগিয়ে এসেছে অনেক।

আরও পড়ুন: নিলামে আসামের চা, দাম প্রতি কেজিতে ৩৯,০০১ টাকা

তবে শুরুটা যে একেবারেই সহজ হয়েনি একথাও জানালেন কল্লোলবাবু। ক্যাফে তৈরির জায়গা না পেয়ে একাধিকবার পিছিয়ে আসতে হয়েছে তাঁকে। লেক গার্ডেন্স, ডোভার লেন, বিজন সেতুর মতো বেশ কিছু জায়গায় সাহায্যের আশ্বাস না পেয়েই সময় গড়িয়েছে। শেষে জুনের শুরুতে এক বন্ধুর গ্যারেজটাই সাজিয়ে নিয়েছেন ক্যাফের মতো করে। তবে মাস কয়েকের মধ্যেই ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বিভিন্ন মহল থেকে। অনেক নামজাদা ক্যাফেই প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রয়োজনে কাজ শিখিয়ে হোমের ছেলেমেয়েদের নিজেদের ক্যাফেতে কাজ দিতে চান তাঁরা।

Hiv Positive Cafe Express photo Shashi GhoshCafe positive-6001-003 জায়গা পাওয়া যায়নি, শেষে বন্ধুর গ্যারেজেই ক্যাফে বানালেন কর্ণধার কল্লোল ঘোষ। ছবি: শশী ঘোষ

শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ নাগাদ, আনন্দঘরের হাত ধরে। খুব ছোট বয়সেই ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল কয়েকজন ফুটফুটে শিশুকে। ওদের মধ্যে কেউ এইচআইভি পজেটিভ, কেউ আবার অটিজিমে আক্রান্ত। সেদিন থেকে এই আনন্দঘর দায়িত্ব নিয়েছিল তাদের বড় করার। পড়াশোনা, হাতের কাজ, কালচারাল অ্যাকটিভিটি সমস্তটা শিখিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফেরানোই ছিল লক্ষ্য। সেদিন খুব ছোট বয়সে যারা এই সংস্থায় এসেছিল, তাঁরা অধিকাংশই এখন যুবক-যুবতী। বছর চারেক আগে জাপান সরকারের তরফ থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে একটি বেকারী ইউনিট তৈরি করে দেওয়া হয় তাঁদের জন্য । প্রথমদিকে ওখানেই বিভিন্ন ধরণের বেকিং শিখেছে ছেলেমেয়েরা। এরপরেই আসে ক্যাফে তৈরির ভাবনা। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আনন্দঘর থেকে ক্যাফে পজিটিভের গল্প শোনালেন কল্লোল ঘোষ।

HIV positive cafe at jodhpur park Express photo Shashi Ghosh চিকেন চিজ স্যান্ডউইচ, সঙ্গে ক্যাপুচিনো। ছবি: শশী ঘোষ

গল্প কিন্তু শেষ হয়নি এখনও। ১ অগস্ট থেকে থাকছে আরও এক নতুন সংযোজন। রান্নার সখ রয়েছে এমন গৃহবধূরাও যোগ দিতে পারেন ক্যাফে পজিটিভের সঙ্গে। ভেজিটেবল চপ, মোচার চপ, মাছের চপের মতো টুকটাক স্ন্যাক্স বানিয়ে তাঁরা বিক্রি করতে পারেন এখানে। তাঁদের বানানো খাবার কিনে নেবে ক্যাফে। আপাতত এমনটাই ক্যাফে পজিটিভের প্রাথমিক স্তরের ভাবনাচিন্তা। তবে ভবিষ্যতে আরও বড়ো পরিসরে ক্যাফে পজিটিভকে তুলে ধরার কথা ভাবছেন প্রত্যেকেই।

দেখে নিন কী কী পাবেন ক্যাফে পজিটিভে:

ক্যাফেতে মিলছে ক্যাপুচিনো, ক্যাফে লাতে, ক্যাফে মোকা সহ বিভিন্ন কোল্ড কফি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ, স্যান্ডউইচ, মাফিন। দামও একেবারেই সাধ্যের মধ্যেই।

publive-image মেনু কার্ড, চোখ বুলিয়ে দেখে নিন আপনার পছন্দ কোনটা। ছবি: শশী ঘোষ

প্রযুক্তি থেকে পড়াশোনা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজব্যবস্থা, খাতায় কলমে আজ অনেকটা সাবালক হলেও একগুচ্ছ কুসংস্কার কিন্তু আজও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে অনেককেই। তাই সেসব বদ্ধমূল ভুল ধারণাগুলো ভাঙতে এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই। পছন্দের ক্যাফের তালিকায় এবার থেকে যোগ হোক ক্যাফে পজিটিভের নাম।

উইকেন্ডের বিকেলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পৌঁছে যান সেখানে। হাসিমুখগুলো আপনার আপ্যায়নের খামতি রাখবে না এতটুকুও। জানুন, এইচআইভি একটা ভাইরাস মাত্র, রক্তের সংস্পর্শ ছাড়া কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই এক্ষেত্রে। তাই চলুন, জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে আমরাও সাহায্য করি ওঁদের। ক্যাফে পজিটিভের হাত ধরে পজিটিভি চিন্তাধারা ছড়াক আপনার, আমার, তথা গোটা সমাজের মধ্যে।

Advertisment