নিজে ছিলেন তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই সময় ছিল গুরুকুল প্রথা। কীভাবে শিশুদের মানুষের মত মানুষ করে তুলতে হয়, তাঁর চেয়ে খুব কমজনেই তা জানত। আর, চাণক্যের সেই জানার অন্যতম ফসল, মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত নিজেই। সেই চাণক্যই বলে গিয়েছেন, সন্তানদের লালনপালন কীভাবে করতে হয়।
এই প্রসঙ্গে তাঁর বিখ্যাত শ্লোক, 'লালয়েত পঞ্চবর্ষানি দশবর্ষানি তাড়য়েত্। প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেত্।।' যার বাংলা তর্জমা করলে হয়- পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত স্নেহে লালন করতে হবে। দশ বছর পর্যন্ত শাসনের মধ্যে পালন করতে হবে। ষোড়শ বর্ষে পুত্রের সঙ্গে পিতা-মাতা বন্ধুর মত আচরণ করবেন।
যার অর্থ, সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য আছে। সন্তানকে উপযুক্ত করে তোলার জন্য তাঁদের সেই কর্তব্য ঠিকমতো পালন করা উচিত। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে অত্যন্ত স্নেহে লালন-পালন করা উচতি। একটি জমিতে চাষ করতে গেলে যেমন আগে মাটি তৈরি করতে হয়, সেইরকমই শিশুমনকে সুশিক্ষা এবং আদর-যত্ন দিয়ে সুগঠিত করা প্রয়োজন। সেই দায়িত্ব বর্তায় শিশুর অভিভাবকদের ওপর।
আরও পড়ুন- সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা না-দিলে সে বাবা-মায়ের শত্রু হবেই, বলেছেন চাণক্য
আর, পাঁচ বছরের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের একটু শাসন করতে হয়। কারণ, সেই সময় থেকে শিশু শিক্ষাগ্রহণের জন্য বাইরের জগতে যায়। অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে তাকে মেলামেশা করতে হয়। মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার পাশাপাশি বন্ধুদের প্রভাবও শিশুর মনের ওপর পড়তে থাকে। ফলে, সেই সময় মা-বাবাকে একটু কঠোর মনোভাবাপন্ন হতে হয়। যাতে শিশুর চরিত্রে কোনও খারাপ লক্ষণ প্রভাব ফেলতে না-পারে। এই সময়ে যাতে সুবিচার এবং বুদ্ধির মাধ্যমে শিশুর মনের বিকাশ ঘটতে পারে, তার জন্য মা-বাবার সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। এমনটাই মনে করেছেন চাণক্য।
তিনি জানিয়েছেন, আবার সন্তান যখন ১০ বছরের গন্ডি পেরিয়ে যায়, তখন থেকেই তার সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করা শুরু করা উচিত। যাতে সন্তান নিজের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের ওপর ধীরে ধীরে মনঃসংযোগ দিতে পারে। কারণ, এরপর থেকে সে ক্রমশ বৃহত্তর সমাজের দিকে এগিয়ে যায়। সেই সময় তার পাশে বন্ধুর মতই থাকা উচিত।