আজ বাংলা ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ১৪ অগ্রহায়ণ। শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি। বড়িশায় চলছে সাবর্ণদের চণ্ডীপুজো। তার পাশের মাঠে ও রাস্তায় বসেছে বিশাল মেলা। ইংরেজ জমানার আগে কলকাতা ছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরীর জমিদারির অংশ। এই পরিবারের বংশধর সন্তোষ রায়চৌধুরী কালীঘাটের মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। আর, সন্তোষ রায়চৌধুরীর বংশধর মহেশচন্দ্র রায়চৌধুরী ১৭৯২ সালে নিজের বাড়িতে চণ্ডীদেবীর আরাধনা শুরু করেন।
কথিত আছে সন্তোষ রায়চৌধুরী নিজের বসতবাড়ির পুকুরে স্নান করতে গিয়ে অষ্টধাতুর কলসি পেয়েছিলেন। সেই কলসি প্রথমে বাড়ির উঠোনে রেখে দিয়েছিলেন। তার তিন দিন বাদে দেবী চণ্ডীকে অষ্টধাতুর কলসিতে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নাদেশ পান। পাশাপাশি, বছরে একবার দেবীর মূর্তি এনে পুজো করার আদেশও পেয়েছিলেন।
সেই সময় ভাটপাড়ার পণ্ডিতদের বিশেষ সমাদর ছিল। তাঁর কাছে সন্তোষ রায়চৌধুরী কী করা উচিত, তা জানার জন্য যান। পণ্ডিতরা সব শুনে জানিয়ে দেন, যিনি স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন, তিনি দেবী চণ্ডী। এর পর যাবতীয় বিধি মেনে সন্তোষ রায়চৌধুরী দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে দেবী চণ্ডীর প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে চণ্ডীবাড়িতে দেবীর জন্মতিথি পালিত হয়।
এই পরিবারের বংশধর হরিশ্চন্দ্র রায়চৌধুরী বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতেই বার্ষিক পুজোর জন্য মন্দির বানিয়ে দেন। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লাষ্টমীতে সেই মন্দিরে শুরু হয় দেবী চণ্ডীর পুজো। দেবী মূর্তি এখানে নরমুণ্ডমালা বিভূষিতা, ত্রিনয়না, রক্তবসনা। তাঁর চার হাতে পুস্তক, রুদ্রাক্ষমালা, বরমুদ্রা ও অভয়মুদ্রা। দেবী পঞ্চ অসুরের মুণ্ডের ওপর অধিষ্ঠিতা।
আরও পড়ুন- শহর কলকাতার মন্দির, যাকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় সিনেমা
আজও মন্দিরের বিগ্রহ তৈরির আগে শিল্পীরা চণ্ডীপুকুরে স্নান করে বিগ্রহের একটি কাঠ নিয়ে সাবর্ণদের প্রতিষ্ঠিত দেবী মঙ্গলচণ্ডীর কাছে পুজো দিয়ে আসেন। সেই কাঠ পুজোর আগে অবধি চণ্ডীবাড়িতেই পুজো হয়। অষ্টমীর দিন ভোরবেলা সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা সেই কাঠ নিয়ে মন্দিরের মূল বিগ্রহের সঙ্গে বেঁধে দিলে তবেই পুজো শুরু হয়।
পাশাপাশি, অষ্টমীর দিন সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়ি থেকে মন্দিরে ভোগ নিয়ে যাওয়ার রীতিও আছে। পুজোয় দেবীকে রাজবেশে সাজানো হয়। নানারকম অলঙ্কারে সেজে দেবী জ্যোতির্ময়ী রূপে মন্দিরে বিরাজ করেন। পুজো চলে নিষ্ঠার সঙ্গে। এর পাশাপাশি প্রতিবছর মন্দির সংলগ্ন মাঠে বসে মেলার আয়োজন। ভক্তরা মনে করেন, দেবী চণ্ডী অত্যন্ত জাগ্রত। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই পুজোর সময় মন্দিরে এসে ভিড় করেন।