শহর কলকাতা বরাবরই শক্তিপীঠের ভূমি। এখানে যেমন সতীপীঠ রয়েছে। তেমনই রয়েছে বহু পুরনো এবং জাগ্রত মন্দির। যেখানে সারাবছর ভিড় করেন ভক্তরা। শুধু তাই নয়, এই শহরের অলিগলিতে পর্যন্ত রয়েছে জানা-অজানা অসংখ্য মন্দির। তার কোনও কোনওটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি। বিদেশিদের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। তারাও এই শহরের কালী আরাধনার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
যেমন, ইংরেজরা কালীঘাটের কালীমন্দিরে যেত বলে শোনা যায়। আবার, কলকাতার ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কথা তো সবাই জানে। তেমনই কলকাতার চিনাপট্টির বাসিন্দাদের অনেকেই সময়ের তালে কালীভক্ত হয়ে উঠেছেন। এমনকী, কলকাতার চায়না টাউনে কালীমন্দির পরিচালনার সঙ্গে পর্যন্ত নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছেন চিনারা।
ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকে কলকাতায় চিনাদের বসবাস। আগে তাঁরা থাকতেন কলকাতার পুরোনো চিনা বাজারে। সেখান থেকে তাঁরা চলে আসেন ট্যাংরা এলাকায়। এমনিতে চিনারা বেশিরভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। কলকাতার চিনা নাগরিকরাও তাই। কিন্তু, বছর ১৬ আগে ট্যাংরার একজন চিনা ব্যক্তি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ, তিনিও ছিলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ভুক্ত।
আরও পড়ুন- খাস কলকাতায়, তবুও অনেকেই জানেন না দেবী চিত্তেশ্বরীর কাহিনি
তার পর থেকে তাঁর পরিবারই কালীমন্দিরটি দেখভাল করে। এই মন্দিরটি ট্যাংরা কালী মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরটি এখন দেখভাল করেন ওই চিনা ব্যক্তির পরবর্তী প্রজন্ম সিন লি। তিনিও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কার্তিক বা কুহু অমাবস্যায় এখানে ভক্তদের ভিড় বাড়ে। দেবীকে ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি, সবজি, পায়েস, মিষ্টি ও ফল। চিনারাও ওই ফলই খান।
কথিত আছে, আগে এই মন্দিরের স্থানে ছিল একটি কালো পাথর। যাকে সিঁদুর মাখিয়ে পুজো করতেন এখানকার ভক্তরা। একবার এক বালক অসুস্থ হয়ে পড়ে। বহু চিকিৎসককে দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এই সময় ওই বালকের মা-বাবা তাকে পাথরটির কাছে নিয়ে আসে। তাতে বালকটি সুস্থ হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকে মানত করে ভালো ফল পেয়েছেন। তারপরই এখানে মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে কালীমন্দিরটি তৈরি হয়েছে, সেটি গ্রানাইট পাথরের।