বদলে যাওয়াই সময়ের চরিত্র। তবে কত দ্রুত বদলে যায় তারও আবার আলাদা আলাদা ধরণ রয়েছে। বাড়ির মা-মাসি-কাকা-পিসিদের মাঝে মধ্যেই বলতে শোনেন, "আমাদের যুগটা অন্যরকম ছিল"। মধ্য তিরিশে পৌঁছে আপনিও বলেছেন, বলছেন অথবা বলবেন। তবে দু'প্রজন্মের এই বদলে যাওয়াটা কিন্তু দু'রকম। বড়দিনেও ধরে ফেলা যায় পাল্টে যাওয়া সময়ের গল্প।
গত শতকের নয়ের দশকে সান্টা আসত বাংলার মধ্যবিত্ত পাড়ায় পাড়ায়, কলকাতায়, মফঃস্বলেও। উপহার হিসেবে থাকত বাজারে সদ্য আসা চিনি মাখানো চকোলেট বিস্কুট, ফুল ফল ছাপা পেন্সিল, ইরেজার, পয়সা জমানোর ভার, সস্তার ব্যাট বল। বিত্তবান পরিবারে জন্মালে কোনও কোনও বার জুটে যেত সাইকেল। সে সব উপহার নিয়ে পরের কয়েক মাস পাড়া জুড়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছিল। উপহার না পাওয়ার দুঃখ ছিল। বাবা মায়েদের চাপে পড়ে হলেও বিকেলে খেলা শেষে গোমরা মুখে সে সব ভাগ করে নেওয়া ছিল। ছিল ২৪ ডিসেম্বর রাত জাগার কী ভীষণ ইচ্ছে এবং জাগতে না পারা ২৫-এর সকালে উত্তেজনায় কেঁপে কেঁপে মশারির ভাঁজ থেকে বেরিয়ে আসত ক্রিসমাস কার্ড, লজেন্স, বালিশের তলায় রং পেনসিল... এই সবই ছিল। ভারতের মতো দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থানে মধ্যবিত্তের বড়দিন আসত এভাবেই।
আরও পড়ুন, চেনা বড়দিন, অচেনা শহর…কেমন আছে কলকাতা?
তিন দশকে সময় বড় দ্রুত পাল্টেছে, ঝড়ের মতো। সান্টা এখন ২৪ ডিসেম্বরের মাঝরাতে আর আসে না। হাড় হিম করা শীতেও জানলা খোলা রাখতে হয়না বাবা মায়েদের। উপহারের অ্যামাজন ডেলিভারি হয়। দিন দুয়েক আগে থেকে মোড়ক দেখেই কচিকাঁচারা ঠিক বুঝে নেয়, কী রয়েছে রাংতায় মোড়া বাক্সে। চোখ কান খোলা হলে দাম টাম বুঝে নিয়ে উপহার চোখে দেখার আগেই আগাম জানিয়ে দেওয়া হয় সঙ্গীদের। আর মোড়ক খোলার মুহূর্তে হাত কাঁপে না। তৃপ্তি হয়তো থাকে, তবে বিস্ময় থাকে না। নতুন উপহার উলটে পালটে খুদেগুলো মিলিয়ে নিতে থাকে, সব ঠিক ঠাক রয়েছে কিনা, মোবাইলে অর্ডার দেওয়ার সময় যেমন দেখা গিয়েছিল, অবিকল সেরকমই তো। মনপসন্দ না হলে বদলেও নেওয়া যায় সান্টার উপহার। শুধু বদলে ফেলা যায় না বিস্ময়হীনতার সংকট।