থমকে গেছে জীবন! কেউ কখনও আশাও করেননি জীবনযাত্রায় এভাবে ফুলস্টপ পড়তে পারে। নিজেদের চিরাচরিত দিনযাপন ছেড়ে বন্দিদশায় বাসা বাঁধতে হতে পারে এরকম সংকেত আসেনি আগে। বিগত দুটি বছর মানুষকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস আর তার সংক্রমণের তাণ্ডব, মানুষ হারিয়েছেন অনেক কিছুই। শুধুই কি স্বজন আর চেনা মানুষের প্রাণ? না, তা একেবারেই নয়, মানুষ হারিয়েছে তাঁর রুজি রোজগারও। হারিয়েছেন নিজের প্রতি বিশ্বাস। প্রশ্ন তুলেছেন নিজের যোগ্যতার প্রতিও। কর্মসংস্থান হারিয়ে পাড়ি দিয়েছেন নিজেদের সুদূর গ্রামে। যথারীতি একটি অতিমারী শুধুই মানুষের শারীরিক অবনতি ঘটায় না। তার সঙ্গে প্রভাব ফেলে তাঁর মানসিক অবস্থায়। নানান চিন্তা, ভাবনা জর্জরিত করে তোলে সামাজিক পরিস্থিতি। আয় নেই,তবে ব্যয় কিন্তু বেড়েই চলেছে।
মহামারীর প্রথম থেকেই নিজেকে বাড়িতেই আবদ্ধ রেখেছিলেন সকলে। স্কুল-কলেজ, অফিস সবই ছিল বন্ধ। একঘয়েমি গ্রাস করেছিল মানুষের জীবনকে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তার সঙ্গে অসুস্থতা সব মিলিয়ে দূর্বিসহ জীবনযাত্রা। তবে এত কিছুর পরেও দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বন করেও আটকানো যায়নি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আবার সেই লকডাউন , গোটা দেশ জুড়ে এবার মৃত্যুমিছিল। সংক্রমণের হার প্রথম বারের তুলনায় অনেক বেশি।
করোনা আবহে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা এখন প্রতিটি মনে। নানান সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে অনেকদিন ধরেই। তবে কিছুটা যেন স্বস্তির লক্ষণ চারিপাশে। গোটা দেশ জুড়ে নানান পরিসরে সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলছে। অতিমারীর প্রথম থেকেই মানুষ আশায় ছিলেন ভ্যাকসিনের। টিকা গ্রহণ পরিবেশ এবং মানুষ উভয়কেই সুস্থ করতে পারে এমন প্রত্যাশাই ছিল সকলের।
আরও পড়ুন সাবধান! এই ৫টি অভ্যাস কমিয়ে দেবে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা
৪৫ বয়সোর্ধ্ব নাগরিকদের প্রথম ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অল্পবয়সীদের থেকে অবশ্যই কম। মহামারীর থেকে যুঝতে সরকার পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভ্যাকসিন অবশ্যই রোগের সম্পূর্ণ নির্মূল সাধন না করলেও তার তীব্রতা হ্রাস করতে সক্ষম। বয়স্ক মানুষেরা এমনকি তার পরিবারের সকলে এখন অনেকটাই প্রশান্তিতে।
দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর অবশ্য অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হন। শুরু হয় ১৮ থেকে ৪৫ বছরের টিকাকরণ প্রক্রিয়া। দেশজুড়ে অনেক যুবক-যুবতীরা টিকা গ্রহণ করেছেন, সুস্থ রয়েছেন, সাহস এসেছে মনে। তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শিশুদেরই বেশি। শিশুদের জন্য টিকাও অদূর ভবিষ্যতে চলে আসবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধীরে ধীরে শারীরিক অসুস্থতা যেমন কমছে তেমনই মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। গৃহবন্দি দশা থেকে নিজেকে একটু একটু করে মুক্ত করছেন মানুষ। ফলতই দুশ্চিন্তা কমছে। সামনেই রয়েছে নানান উৎসব। জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী এবং দুর্গোৎসব। সারা বছরের অপেক্ষা থাকলেও গত একবছর ধরে উৎসবমুখর ভারতীয়রা অতিমারীর কারণে বিরত থেকেছেন উদযাপন থেকে। বছর ঘুরলেও করোনা আজও নিশ্চিহ্ন হয়নি! উৎসবের লক্ষ্যে আশা বাঁধছেন সকলেই। ডিলয়েটের গ্লোবাল কনজিউমার ট্র্যাকার সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৮৭% মানুষ সুবিধার্থে ব্যয় করতে রাজি।
আরও পড়ুন করোনা ছাড়াও বর্ষায় আরও অনেক রোগের ভয়! সুস্থ থাকবেন কীভাবে, জেনে নিন
৬১% মানুষ এখন আর দোকান বাজারে যেতে ভয় করছেন না। ৫১% মানুষ নানান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। ৭৯% মানুষ নিজের শরীর নিয়ে এবং ৮৫% মানুষ পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত। তবে গণপরিবহন বন্ধ রাখতেই বেশিরভাগ লোক মত দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের যানবাহনে চলাচল করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষজন বাইরে বেরোতে বেশি আগ্রহী। ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে তাঁদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলেই জানান দিচ্ছে সমীক্ষা। রেস্তোরাঁ, হোটেলে অনেক মানুষই যাচ্ছেন। যদিও বা ট্রেন এবং বিমানে যাত্রার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই দ্বিতীয় বিকল্পই বেছে নিচ্ছেন।
মানুষ জয় করছেন নিজের মনের ভয়। বাইরের পৃথিবীকে আবার আপন করে নেওয়ার চেষ্টায় রত সকলেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন