কথিত আছে তারাপীঠের মহাসাধক বামাক্ষ্যাপাকে মন্ত্র দিয়ে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসিয়ে তন্ত্রশিক্ষা দিয়েছিলেন মহাসাধক কৈলাসপতি। পূর্বাশ্রমে বাংলার ছেলে হলেও তাঁর যোগশিক্ষা কিন্তু, বাংলায় হয়নি। বরং, হিমালয়ের কোলে সাধনার মাধ্যমে উত্তরভারতে নিজেকে মহাসাধক হিসেবে মেলে ধরেছিলেন তিনি। নিজের গুরুর আদেশে বিশেষ কার্যসিদ্ধির জন্য ফের বাংলায় এসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মন্দির। আর, সেই মন্দিরের জন্য তৎকালীন সময়ে একলক্ষ টাকা দান করেছিলেন কাশ্মীরের মহারাজা। শুধু দানই নয়, কৈলাসপতির প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের নিত্যপুজোর খরচ মেটাতে কাশ্মীরের মহারাজা মাসিক ৫০ টাকা বরাদ্দও করেছিলেন। আর, এই সব তিনি করেছিলেন শুধুমাত্র কৈলাসপতির জন্য।
তারাপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী তারার মন্দির থেকে দক্ষিণে ছয় কিলোমিটার দূরে রয়েছে ডাবুক গ্রাম। সেখানেই রয়েছে কৈলাসপতি প্রতিষ্ঠিত মন্দির। যে মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ডাবুকেশ্বর উন্মত্তেশ্বর মহাদেশ। এই মন্দিরের স্বয়ম্ভূ তথা পাতালভেদী। ৪০ গর্ত খুড়েও এই শিবলিঙ্গের তলের সন্ধান মেলেনি। পরবর্তীতে মদন গোঁসাই, পূর্ণানন্দ স্বামী, কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর মত অনেকে কৈলাসপতির থেকে দীক্ষা নিয়ে সাধনা ও সিদ্ধিলাভ করেন। সাধক বামাক্ষ্যাপাও নানা সময় এই মন্দিরে আসতেন। তিনিই এখানকার শিবলিঙ্গের সংস্কার করেছিলেন। তারকেশ্বরের মত মল্লেশ্বর এবং উন্মত্তেশ্বর শিবলিঙ্গও স্বয়ম্ভূ, অখণ্ড এবং অনাদিলিঙ্গ।
আরও পড়ুন- কলকাতার লাগোয়া হনুমান মন্দির, দূর হয় বিপদআপদ-ভূতের ভয়, পূর্ণ হয় মনস্কামনা
এই মন্দিরের বিশেষত্ব, উন্মত্তেশ্বর শিবের প্রতিদিন অন্নভোগ হয়। এখানে দেবী তারার মূর্তিও আছে। কারণ, উন্মত্তেশ্বর আসলে দেবী তারার ভৈরব বলেই ধরা হয়। এখানে দেবী তারাকে অন্নভোগও দেওয়া হয়। শিবরাত্রি এবং শ্রাবণ ও চৈত্রমাসে এখানে ব্যাপক ভিড় হয়। জাগ্রত শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে সেই সময় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। দেশ-বিদেশ থেকে বহু সাধক ও সন্ন্যাসী এই মন্দিরে যাতায়াত করেন। বহু সাধক, এই মন্দিরে শৈব সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন। এককথায় ডাবুকের এই মন্দির আসলে শৈবতীর্থ। আর, সেই কারণেই মনস্কামনা পূরণের জন্য সারাবছর দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন বীরভূমের এই মন্দিরে।