একসময় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কালীপুজো করে ডাকাতরা ডাকাতি করতে যেত। ডাকাতির আগে এই পুজোর কারণ ছিল, দেবীর কাছে প্রার্থনা, যাতে তারা সফল হয়। তাদের কোনও ক্ষতি যেন না-হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে কালীপুজো করে ডাকাতির চল উঠে গিয়েছে।
যাদের নিয়ে হাজারো কাহিনি প্রচলিত ছিল, বাংলার সেই ডাকাতরাও আর নেই। তবে, তাদের সেই কালীপুজোগুলো রয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ, স্থানীয় বাসিন্দারা সেই পুজোর চল বহাল রেখেছেন। কিন্তু, বহু জায়গাতেই সেই সব পুজোর নাম ডাকাতকালী পুজোই থেকে গিয়েছে আজও।
এই সব ডাকাত কালী পুজোর অন্যতম স্থান সিঙ্গুরের ডাকাত কালীমন্দির। কথিত আছে, একটা সময় সিঙ্গুর অঞ্চল ডাকাতির জন্য কুখ্যাত ছিল। এমনকী, প্রতি অমাবস্যায় ডাকাত কালীর কাছে নরবলিও দেওয়া হত। দেবী সারদাও সেই ডাকাতদের হাতে পড়েছিলেন।
সেই সময় এই অঞ্চলে গগন ডাকাত দলবল নিয়ে ডাকাতি করে বেড়াত। যাঁরা জানতেন, এই অঞ্চল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু, রামকৃষ্ণদেব অসুস্থ শুনে দেবী সারদা আর অন্য কিছু ভাবতে পারেননি। তিনি ওই জঙ্গলের পথই ধরেছিলেন।
আরও পড়ুন- বুড়োশিবকে ঘিরে অজস্র অলৌকিক কাহিনি, কামনা করলে খালিহাতে ফিরতে হয় না ভক্তদের
সেই সময় মাঝরাস্তায় ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন সারদা দেবী। তাঁর পালকির পথ আটকে পথে দাঁড়ায় গগন ডাকাত ও তার দলবদল। ডাকাতদের দেখেই পালকির বাহকরা পালিয়ে যায়। কথিত আছে, এই সময় ডাকাতরা দেবী সারদার মধ্যে কালীর রূপ দর্শন করেছিল। তাই দেবী সারদার কাছে কৃতকর্মের জন্য ডাকাতরা ক্ষমা চায়।
তখন রাত্রি হয়ে যাওয়ায় ডাকাতরা দেবী সারদাকে আর সেদিন ফিরতে দেয়নি। রেখে দিয়েছিল নিজেদের ডেরায়। রাতে খেতে দিয়েছিল চাল ও কড়াই ভাজা। সেই প্রথা আজও চলছে। শ্যামাপুজোর সময় সিঙ্গুরের ডাকাতকালীকে চাল ও কড়াই ভাজা অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়।
এখানে মন্দিরটি উঁচু বেদির ওপর তৈরি, দক্ষিণমুখী ও আটচালা। গর্ভগৃহের সামনে ভক্তদের জন্য রয়েছে অলিন্দ। তার সামনে রয়েছে নাটমন্দির। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা গোটা মন্দির চত্বর। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত।