Advertisment

স্কাইওয়াকের পৌষমাসে কি দক্ষিণেশ্বরে ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ?

বেলা গড়িয়ে যায় কিন্তু বউনি হয় না, পসরা সাজিয়ে দোকান খুলতেও আজকাল মন চায় না, স্কাইওয়াকের কারণে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
dakshineswar skywalk, দক্ষিণেশ্বরে স্কাই ওয়াক

দক্ষিণেশ্বরে স্কাই ওয়াক। ফাইল ছবি।

রাস্তা দুধারে ব্যস্ত ফুটপাত, ডালির দোকানের ডাকাডাকি, হইহট্টগোল, ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া লাল রোবট, বেলুনওয়ালা, অটো রিকসার বিরক্তিকর হর্নের আওয়াজ, এসব এখন অতীত। বেশ কিছুদিন আগেই দক্ষিণেশ্বরের সামনে থেকে তুলে দেওয়া হয় ওইসব দোকানপাট। সেখানে এখন নির্মীয়মাণ মুখ্যমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্ট, যার নাম স্কাইওয়াক। রেল অনুমোদিত সংস্থা রাইটস 'সেফটি সার্টিফিকেট' দিলে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সম্ভবত উদ্বোধন করা হবে প্রকল্পটির। কিন্তু যে সব দোকানদারদের উৎখাত করা হয়েছে, তাঁরা? তাঁরাও কি স্কাই ওয়াকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাগীদার হবেন, নাকি আকাশে হাঁটার মাশুল গুনবেন?

Advertisment

Dakshineswar Sky Walk 1 ভোল বদল ঘটেছে দক্ষিণেশ্বর চত্বরের। ছবি: অরুণিমা কর্মকার

১০.৫ মিটার চওড়া এবং ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক। প্রকল্পের দুদিক জুড়ে রয়েছে রেলের আবাসন, সাইটের একজন ম্যানেজার জানিয়েছেন রেল কোনোরকম আপোষ করেনি এই প্রকল্পের সঙ্গে, যে কারণে এর চেয়ে বেশি সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও রামকৃষ্ণ পরমহংশ রোডের তলা দিয়ে হাইড্রান্ট যাওয়ার কারণে শুরুতেই থমকে গিয়েছিল কাজ। রাস্তার ওপর থেকে দোকান সরাতে গিয়েও বহু সমস্যার মুখে পড়তে হয়ে সংস্থাকে। সব মিলিয়ে ১৮ মাসের প্রজেক্টের নির্ধারিত সময়সীমাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে সেসব এখন ইতিহাস। সামনেই প্রোজেক্ট শেষ করার ডেডলাইন।

Dakshineswar Sky Walk2 নির্মীয়মাণ স্কাইওয়াক

কী থাকবে স্কাইওয়াকে?

ওঠানামার জন্য ১৪ টি চলমান সিঁড়ি, চারটি লিফট এবং আটটি সিঁড়ি থাকবে স্কাইওয়াকে। পরিকাঠামোর নকশার ভার রয়েছে ডিজাইন ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার হাতে। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট বা স্থপতি আনন্দ শর্মা জানিয়েছেন, প্রথমে দোকানের কোনো নকশা করার কথা তাদের জানানো হয়নি, পরবর্তী কালে প্রকল্পের পরিকাঠামো বদলাতে হয়। প্রায় ২০০টি দু ফুট বাই দু ফুটের দোকান বানানো হয়েছে স্কাইওয়াকের ওপর। অত্যধিক ভীড়ের কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলিকে একমুখী করে বানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, স্কাইওয়াকের পরিকাঠামোর কারণে খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যাবে। ওপরেই থাকবে জল সহ বর্জ্যপদার্থ নিকাশি ব্যবস্থা। স্কাইওয়াকের সঙ্গে সোজাসুজি যোগ করা হয়েছে রেল স্টেশনের, যাতে ট্রেন থেকে নেমেই সোজাসুজি ঢুকে যাওয়া যায় মন্দির প্রাঙ্গনে। স্কাইওয়াকের নিচ দিয়ে চলাচল করবে গাড়ি। যার ফলে কালীপুজো হোক বা পয়লা জানুয়ারি, ভীড়ে সমস্যা হবে না বলে আশা করছে নির্মাণকারী সংস্থা।

সমস্যাটা অন্য জায়গায়। বেলা গড়িয়ে যায় কিন্তু বউনি হয় না, পসরা সাজিয়ে দোকান খুলতেও আজকাল মন চায় না, স্কাইওয়াকের কারণে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অগাস্টের ২ তারিখ যোগ্য অধিকার পাওয়ার শুনানির দিকে তাকিয়ে দোকানদাররা। উৎখাতের সময় ডালির দোকানের কমিটি থেকে অভিযোগ জানালে কামারহাটি পৌরপ্রধান গোপাল সাহা তাদের আশ্বাস দেন, স্কাইওয়াক তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সেখানকার দোকানঘর তাঁরা পাবেন।

দোকানদারদের দাবি, সবটাই মৌখিকভাবে বলা হয়েছে তাঁদের। কাগজকলম বলতে ১৮ মাস বা তার অধিক সময়ের জন্য নিজেদের জায়গা ছেড়ে সরে যেতে বলা হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে পৌরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, "দোকানের যথাযথ নথিপত্র থাকলে তাঁরা অবশ্যই দোকান পাবেন, প্রকল্পের শুরুতেই তা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।"

Dakhineshwar Skywalk অস্থায়ী দোকান

কামারহাটি পুরসভার পক্ষ থেকে রানী রাসমণি সরণীতে মন্দিরের পিছনের রাস্তায় তৈরি করে দেওয়া হয় অস্থায়ী দোকানও। সে সময় দোকানদারদের জানানো হয়, প্রকল্পের কাজের জন্য মন্দিরের রাস্তাও ঘুরিয়ে দেওয়া হবে, ফলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে না। কিন্তু বর্তমানে স্কাইওয়াকের কারণে তাঁদের ব্যবসায় রীতিমত ভাঁটা দেখা দিয়েছে।

কেউ কেউ আশা করছেন, আগে যাঁদের ওই জায়গায় দোকান ছিল, তাঁদেরকেই মূলত স্কাইওয়াকের ওপরে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে। আবার অনেক ব্যবসায়ী হাল ছেড়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। সম্প্রতি বহু ডালির দোকানের ঝাঁপ বন্ধ, ডালির ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশার কথা ভাবছেন বেশ কিছু দোকানদার। তবে এখনও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ চেয়ে আছেন সব ব্যবসায়ীই।

Mamata Banerjee kolkata news indian railway Kolkata Skywalk
Advertisment