১৮৫৫ সালের ৩১ মে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এক সাধনক্ষেত্রের। যা আজ শুধু বাংলা নয়। গোটা ভারত এমনকী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের তীর্থভূমি হয়ে উঠেছে। দক্ষিণেশ্বর মন্দির। যার কথা আজ একডাকে ভারতের অধিকাংশ ধর্মভীরু মানুষ জানেন। গঙ্গাতীরে কালীসাধনার যে ক'টি তীর্থস্থান রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান তীর্থক্ষেত্র এই দক্ষিণেশ্বর।
১৫৭ বছরের প্রাচীন এই তীর্থস্থানের আরাধ্যা দেবী ভবতারিণী। যার প্রতিষ্ঠাতা জানবাজারের রানি রাসমণি। আর, মৃন্ময়ী মূর্তিকে চিন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠাতা উনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট যোগী সাধক রামকৃষ্ণ। জনশ্রুতি আছে যে ১৮৪৭ সালে রানি রাসমণি কাশীযাত্রা আগের দিন স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন দেবী কালীর। সেই স্বপ্নাদেশে দেবী জানিয়েছিলেন, তাঁর কাশীযাত্রার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরে মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করলেই দেবী পূজা গ্রহণ করবেন।
সেই সময় সাহেবান বাগিচার জমিটি ছিল কচ্ছপের পিঠের মত। তন্ত্রমতে শক্তি আরাধনার জন্য যা অত্যন্ত উপযুক্ত বলেই বিশ্বাস করেছিলেন রানি। এর একটি অংশ ছিল মুসলমানদের কবরখানা। আর, এই সাহেবান বাগিচার মালিক ছিলেন জন হেস্টি নামে এক ইংরেজ। তাঁর থেকে ২০ একর জমি কিনেছিলেন রানি রাসমণি।
মন্দির তৈরির পর পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হয় কলকাতার ঝামাপুকুর চতুষ্পাঠীর পণ্ডিত হুগলির কামারপুকুরের বাসিন্দা রামকুমার চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি মারা গেলে মন্দিরের পুরোহিত নিযুক্ত করা হয় তাঁর ভাই গদাধর চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি পরবর্তীকালে পরিণত হন যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণে। মৃত্যুর আগে অবধি তিনিই ছিলেন এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। শান্তির খোঁজে যাঁর কাছে বারবার ছুটে এসেছেন গিরীশচন্দ্র ঘোষ থেকে শুরু করে শহর কলকাতার তাবড় বিদ্বজ্জনেরা।
আরও পড়ুন- বাংলার শক্তিপীঠ, যেখানে মনস্কামনা পূরণের আশায় ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের ভক্তরা
ঐতিহ্যগত নবরত্ন রীতিতে তৈরি বর্গাকার এই মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৪.২ মিটার। উচ্চতা প্রায় ৩০.৪৮ মিটার। কলকাতা ও উত্তর শহরতলির অন্যতম বৃহৎ এই মন্দিরের মূল মন্দির তিন তলা। ওপরের দুটি তলে রয়েছে এর নয়টি চূড়া। ৪৬ বর্গফুট প্রসারিত ও ১০০ ফুট উঁচু দালানের ওপর এর গর্ভগৃহ। যেখানে রুপোর তৈরি হাজার পাপড়ির পদ্মে শায়িত শিবের ওপর বুকে পা রেখে দাঁড়িয়ে আছেন দেবী দক্ষিণাকালী ভবতারিণী।
মন্দিরের উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ বা রাধাকান্ত মন্দির। দক্ষিণদিকে রয়েছে নাটমন্দির। গঙ্গার ধারে রয়েছে আটচালা স্থাপত্যরীতিতে তৈরি দ্বাদশ শিবমন্দির। যে মন্দিরগুলোর সবক'টিই পূর্বমুখী। চাঁদনি স্নানঘাটের দুই দিকে ছ'টি করে মোট ১২টি শিবমন্দির।