বামক্ষ্যাপার সঙ্গে যেমন তারাপীঠ, তেমনই তীর্থক্ষেত্র দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শ্রীরামকৃষ্ণের (গদাধর চট্টোপাধ্যায়) নাম। তাঁর জন্মের অনেক আগে থেকেই তাঁর আগমনের বিভিন্ন অলৌকিক পূর্বাভাস শ্রীরামকৃষ্ণের পিতামাতা পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। যেমন, ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের বাবা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় গয়ায় তীর্থভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানে এক রাতে ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের স্বপ্নে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। স্বপ্নে জানিয়েছিলেন, সন্তানরূপে ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের বংশে জন্ম নেবেন। এরই একবছর পর জন্ম হয়েছিল রামকৃষ্ণদেবের। শুধু তাই নয়, তাঁর মা চন্দ্রাদেবী গিয়েছিলেন শিবমন্দিরে। সেখানে তিনি দেখেন, এক দিব্যজ্যোতি মহাদেবের মধ্যে থেকে তাঁর শরীরে প্রবেশ করছে। এরপরই গর্ভবতী হন চন্দ্রাদেবী।
শ্রীরামকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত দক্ষিণেশ্বর। দেবী এখানে ভবতারিণী রূপে পরিচিত। প্রতিবছর কার্তিক অমাবস্যা উপলক্ষে আয়োজিত কালীপুজোয় এখানে থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ১৮৫৫ সালে রানি রাসমণি এই দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এবছর এখানকার কালীপুজো ১৬৯ বছরে পড়েছে। এখানে শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব- তিন ধারার পুজোই একসঙ্গে হয়। তার মধ্যে দেবী কালীর পুজো হয় শাক্তমতে। বৈষ্ণব মতে হয় রাধাকৃষ্ণের পুজো। আর এখানে আছে দ্বাদশ শিবমন্দির। সেখানে হয় শৈব ধারায় উপাসনা। রবিবার, ভোর সাড়ে ৫টায় মন্দির খুলেছে। হয়েছে বিশেষ আরতি। কার্তিক অমাবস্যা তিথিতে এখানে দেবী ভবতারিণীর পুজো, ধূপ আরতি, সন্ধ্যারতি এবং বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন- দীপান্বিতা অমাবস্যায় বিশেষ আয়োজন, বামদেবের স্মৃতিধন্য তারাপীঠে সাজো সাজো রব
রবিবার ভোর থেকেই মন্দিরে ব্যাপক ভক্ত সমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিকেল থেকেই ভিড় আরও বাড়ার সম্ভাবনা। নাটমন্দিরে বসানো হয়েছে ক্যামেরা। সেখান থেকে অনলাইনেও পুজো দেখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ভোরে দেবীর ঘট স্নানের পর পুরনো ঘটেই গঙ্গাজল ভরা হয়েছে। দেবীকে এই বিশেষ তিথিতে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকম ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকম মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। এখানে কারণবারির (মদ) বদলে ডাবের জল দিয়েই দেবীর পুজো হয়।