Advertisment

সাঁই ধর্মস্থানের মতই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন দাতা বাবার মাজার, ছাই-স্নানজলে সারে রোগ

দূর-দূরান্ত থেকে বাবার কৃপালাভের আশায় এই মাজারে ছুটে যান অসংখ্য ভক্ত।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Data_Baba

রাজ্যের এই মাজারে ছাই-স্নানের জলে সারে যে কোনও রোগ। এমনটাই দাবি ভক্তদের। বীরভূমের সিউড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পাথরচাপুরি। আর, সেখানেই রয়েছে দাতা বাবার মাজার। আসল নাম হজরত দাতা মেহবুব শাহ। পরে তিনি দাতা বাবা নামে খ্যাতি লাভ করেন। এই মাজার কয়েক শতাব্দী প্রাচীন। এখানে মাজারে প্রবেশের সময় ভালো করে হাত-পা ধুয়ে নিতে হয়। আজও এই অঞ্চলে দাতা বাবার অলৌকিক ক্ষমতার কথা ভক্তদের মুখে মুখে ঘোরে। দাতা বাবা ছিলেন এক নামী সুফি পির। সব ধর্মের মানুষের কাছেই দাতা বাবা একজন ফকির সাধক হিসেবে শ্রদ্ধেয়।

Advertisment

বাংলার ১২৯৮ সালের ৯ চৈত্র সন্ধ্যায় দাতা বাবার প্রয়াণ ঘটেছিল। হজরত দাতা মেহবুব শাহর প্রয়াণের পর তাঁর নামে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলার ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত। সেই সময় তিনি ছিলেন জেলাশাসক। ব্রিটিশ জমানায় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে এই মেলার সূচনা হয়। যাকে দাতাপিরের মেলা বলে। অনেকে একে পাথরচাপুরি মেলাও বলেন। প্রতিবছর ১০ চৈত্র বীরভূমের পাথরচাপুরিতে এই মেলা বসে। প্রতিবছর এখানকার মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। আর, গোটা দেশ থেকে আসেন ভিক্ষুকরা। প্রতিবছর তিন থেকে চার দিন এই মেলা চলে।

কথিত আছে, ছোটবেলায় পারস্যের গল্প শুনতে শুনতে সেখানকার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন দাতা মেহবুব শাহ। তিনি ইরানে গিয়ে সেখানকার দরবেশের কাছে জ্ঞান এবং উপদেশ লাভ করেছিলেন। এরপর ফিরে আসেন নিজের দেশে। তিনি যখন দেশে ফিরেছিলেন, তখন তাঁর গলায় ছিল যজ্ঞের মত উপবীত। হাতে ছিল দরবেশের মালা। আর, শরীরে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ভূষণ। এরপর নানা জায়গায় ঘুরতে থাকেন দাতা বাবা। আর, প্রত্যেক জায়গায় তাঁর অলৌকিক কাজকর্ম প্রকাশ পায়। এরপর তিনি পৌঁছন পাথরচাপুরি গ্রামে। এরপর, এখান থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কথা বীরভূমজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

আরও পড়ুন- দেবী শুয়োরে কালী, কয়েকশো বছর ধরে জাগ্রত দেবীর মহিমার সাক্ষী ভক্তরা

দাতা বাবার লম্বা দাড়ি ছিল। পোশাক ছিল হলুদ। গায়ের রং ছিল কালো। হাতে থাকত চিমটে ও লাঠি। কথিত আছে, তাঁর ওই লাঠি আর চিমটে বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী। কথিত আছে, তিনি তামাক সেবন করতেন। সেই তামাক সেবনের ছাই থেকেই সেরে যেত ভক্তদের রোগ-ব্যাধি। সেই কারণে, আজও এই মাজারে ভক্তদের রোগ-ব্যাধি সারাতে গেলে ছাই দেওয়া হয়। ছাইয়ের পাশাপাশি দেওয়া হয় তেল ও জল। এই তেল হল প্রদীপের তেল। বছরে চার বার দাতা বাবার সমাধিতে স্নান করানো হয়। সেই স্নানের জলই দেওয়া হয় ভক্তদের। এই ছাই, জল ও তেলের সাহায্যেই নাকি সেরে যায় যে কোনও ব্যাধি। আর, সেই বিশ্বাসে এই মাজারে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে।

পাথরচাপুরির কাছেই চাঁদপুর। কথিত আছে, দাতা বাবা যে কাঠি দিয়ে দাঁত মাজতেন, কোনও একবার জলের জন্য সেই কাঠিকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন। আর, সেখান থেকেই ঝরনার আকারে বেরিয়ে এসেছিল জল। সেই জলও নাকি রোগ নিরাময় করে। চাঁদপুরে আসলে আজও সেই কুয়ো দেখা যায়। ভক্তরা এখানে এসে নিয়ত জল সংগ্রহ করে নিয়ে যান। সারা পৃথিবী থেকে এখানে ভক্তরা আসেন। দাতা বাবা একটি মাদ্রাসাও তৈরি করেছিলেন। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে পাথরচাপুরি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। অথবা, সিউড়ি রেল স্টেশন থেকে টোটো চেপেও যাওয়া যায় দাতা বাবার মাজারে।

Muslim holi
Advertisment