শৈশব আর থাকল কই? আপনার পরিবারের খুদে সদস্যটি দুবছরে পড়তে না পড়তেই স্কুল ব্যাগ কাঁধে তরতর করে উঠে পড়ছে স্কুল বাসে। ফিরতি পথে ক্যারাটে না হয় অ্যাবাকাসের ক্লাস করে মোবাইলে গেম খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরেই নাকে মুখে গুঁজে ঘুম। ব্যাস, সপ্তাহান্তে একটু ফুরসত পেয়ে যখন চোখ রাখলেন ওর চোখে, দেখছেন রাতারাতি কেমন বড় হয়ে যাচ্ছে আপনার সন্তান। তারিয়ে তারিয়ে আপনার সন্তানের শৈশব উপভোগ করবেন, সেটা বোধহয় আর হবে না, বরং ক্রমশ বাড়তে থাকা ডিজিটাল আগ্রাসনের মাঝে ওর যেটুকু শিশুমন বেঁচে আছে, সেটুকুকেই অক্সিজেন দিন আরও একটু।
নিজের পরিবারেই আপনার সন্তান লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না তো?
এই যে মোবাইলে খুটখুট করেই কেটে যাচ্ছে আপনার সন্তানের জীবনের সোনালী বিকেলগুলো, আপনি নিশ্চয়ই চিন্তায় থাকেন, নেশা ছাড়াবেন কী করে বুঝতে পারেন না। আবার কখনও ওর অজস্র প্রশ্নবাণ থেকে রেহাই পেতে আপনিই হাতে ধরিয়ে দিলেন নতুন ট্যাবলেটটা। তার ওপর ক্লাসে পড়া পারলে তার বিনিময়ে ভিডিও গেমের অনুমতিটাও বাড়ির বড়দের থেকে আদায় করেছে খুদে। কী ভাবে ওর ডিজিটাল নেশা কাটাবেন, ভেবে ভয় হচ্ছে?
শিশুমন এবং ডিজিটাল মাধ্যম
ব্রিটেনের হেলথ সার্ভিস রিপোর্ট কিন্তু বলছে, ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মানসিক বিকার ঘটে যাদের, তাদের অধিকাংশই ডিজিটাল মাধ্যমের প্রতি আসক্ত। আর এই ডিজিটাল আসক্তি আপনার সন্তানদের শৈশব থেকে কেড়ে নিয়েছে মেঠো বিকেল, ঘাসের অভাব পরোয়া না করে আর মাঠেঘাটে ধুলো মেখেও বেড়ায় না বাচ্চাগুলো। স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের মধ্যে বাড়ছে স্থুলতা, অবসাদ। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, ভারতের ২৫ শতাংশ শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে ১৮ শতাংশ শিশু শুধুই পড়াশোনার কারণে ব্যবহার করে তা।
আরও পড়ুন, হিউম্যান লাইব্রেরি: শহরে এই প্রথম বই-মানুষের বৈঠক
ক্লাসরুমে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
এই যুগে প্রযুক্তিকে অস্বীকার করে বেঁচে থাকা অসম্ভব, সেটা যে কোনো বয়সেই। আজকাল নানা স্কুলে আধুনিক পঠন পাঠনের পদ্ধতি হিসেবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা শুরু করেছে। ই-বুক, অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম-এর মাধ্যমে বাচ্চারা অনেক তাড়াতাড়ি নতুন জিনিস শিখতে পারছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই ভাবেই ডিজিটাল নির্ভরতা বাড়ছে শৈশব থেকেই।
সন্তানকে সময় দিন, কথা বলুন
যে প্রযুক্তিকে একবার জীবনে গ্রহণ করে ফেলেছে, তার পক্ষে ওটা ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়। শিক্ষক কিংবা বাবা-মায়েরা খেয়াল রাখুন, বাচ্চাদের ডিজিটাল নির্ভরতা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। স্ক্রিনে ডুবে থাকার সময় বেঁধে দিন। নাহলে আসক্তি বাড়তেই থাকবে। আর পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে মুঠোফোন হাতে এক কোণে বসে থাকতেই অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে আপনার সন্তান। সেটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ডিজিটাল জগতে আপনার সন্তানের শুধুই সুখকর অভিজ্ঞতা হয় না। সাইবার ক্রাইম-এরও শিকার হতে পারে খুদে সদস্যটি। ওকে ওর অভিজ্ঞতা খুলে বলবার মতো পরিবেশ দিন।