Delhi Durga Puja 2018: কলা, বেদানা, হলুদ, জয়ন্তী, অশোক, বেল, কচু, মানকচু ও ধান গাছ। মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গা যে ‘অষ্টনায়িকা’ সৃষ্টি করেন, যাঁরা দেবীর যুদ্ধে সহায়িকা হন এবং যাঁদের সঙ্গে মিলে দেবী নবদুর্গা রূপে পরিচিত হন। ওই নটি গাছ বা নব পত্রিকা হল নবদুর্গার প্রতিরূপ। সপ্তমীর দিন নবপত্রিকাকে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করিয়ে অপরাজিতা গাছের লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। নবপত্রিকা অসুরের উপর দেবীর বিজয়ের প্রতিভূ। এরপর আমপাতা এবং ডাব ঘটের উপর অধিষ্ঠান করিয়ে নবপত্রিকারূপে নবদুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এসব তো গেলো তত্ত্বকথা। কিন্তু সপ্তমী আসতে আসতে দুর্গাপুজোর মরশুম ধীরে ধীরে গতি নিতে শুরু করেছে। দিল্লিতেও। আকাশ বাতাস দিল্লিতে একটু ঠাণ্ডা গন্ধ শরীরে মেখে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে অফিস কাছারির এখনই বিরাম নেই। তারই মধ্যে দিল্লির বাঙালিরা মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছে।
আরও পড়ুন, Delhi Durga Puja 2018: দিল্লিওয়ালা দুর্গাপুজো- ষষ্ঠী
কলকাতার অ্যাপার্টমেন্টের পুজোগুলোর সঙ্গে দিল্লির অধিকাংশ পুজোর চরিত্রগত মিল আছে। সকালে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। আবৃত্তি, বসে আঁকো থেকে শুরু করে আলপনা অথবা রঙ্গোলি, শঙ্খধ্বনি, ক্যুইজ ছাড়াও আরও বেশ কিছু। বিকেলে যে সব ক্লাব বা পুজো সমিতির সদস্যদের সাংস্কৃতিক মনস্কতা বেশি তারা ইনহাউস প্রোগ্রাম করে আর না হলে কলকাতা বা বোম্বের ‘আর্টিস’রা তো রয়েইছেন।
আর এখানেই সমস্যাটা। দিল্লির বাইরে থেকে যাঁরা পুজোয় পারফর্ম করতে আসেন তাঁরা যেন মনে করেন দিল্লি হল টাকার কুয়ো, যেখানে সংস্কৃতি বোদ্ধার সংখ্যা খুবই কম বা নেই। অবশ্য পুজো কমিটিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সারা বছর বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে কোন যোগাযোগ না রেখে স্টেজে মেরে দেবার মানসিকতা নিয়ে শেষ মাসে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে কলকাতা বা বোম্বের শিল্পীদের দর বাড়িয়ে দেয় তা অস্বীকার করা যায় না। অবশ্য এগুলোকে জেনারেলাইজড মন্তব্য বলেই ধরা যেতে পারে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। এবং তার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবুও, যদি দিল্লির নিজস্ব প্রতিভাদের মঞ্চ প্রদান করা হয় তাহলে অতিরিক্ত খরচও বাঁচে কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গুণমানে খুব বেশি মনে হয় হেরফের হয় না। যদিও এসব প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত মতামত। তবুও মনে হয় এদিকটা একবার দেখার দরকার পড়েছে।
তা এবারে আসুন আমরা পরিক্রমায় ফিরে যাই। আসলে দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গে নবরাত্রির সন্ধ্যাগুলোও গতি পেয়ে গেছে। তাই পথে দেরি হয়েই যায়। তাও আজকের গন্তব্য ছিল মধ্য ও কিঞ্চিৎ উত্তর দিল্লির ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলো। মিন্টো রোড, করোলবাগ, প্যাটেল নগর, আরামবাগ, নতুন দিল্লি কালীবাড়ি পেরিয়ে কাশ্মীরী গেট এবং তিমারপুর। করোলবাগের পুজোটা আজমল খান মার্কেটের দক্ষিণে হয়। এমন ভিড়ভাট্টাওলা এলাকা যে সন্ধ্যায় গাড়ি পার্ক করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। প্যাটেল নগরের পুজোটি এবার ৫৩ বছরে পদার্পণ করেছে। এবারেই বিশেষ করে প্যাটেল নগরের পুজোর সকল পদাধিকারী মহিলা। যদিও চিত্তরঞ্জন পার্ক বি ব্লকেও পুজো মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত, তবুও প্যাটেল নগরের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুন, Delhi Durga Puja 2018: দিল্লিওয়ালা দুর্গাপুজো- পঞ্চমী
গোলমার্কেটের কাছে আরামবাগের পুজো আরেকটি ঐতিহ্যবাহী পুজো। ঠিক যেমন নতুন দিল্লি কালীবাড়ি এবং তিমারপুর ও কাশ্মীরী গেট। কাশ্মীরী গেট বয়সের দিক থেকে দিল্লির প্রাচীনতম। তিমারপুর খুবই কাছাকাছি।
তবে একটা দিক সত্যি, প্রতিটি পুজোই কিন্তু পরিবেশের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। পুজো মণ্ডপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাই হোক, অথবা পরিবেশ বান্ধব উপাদান দিয়ে প্রতিমা ও প্যান্ডেল নির্মাণ।
কাশ্মীরী গেট বেঙ্গলী ক্লাবের পুজোটি দিল্লি বিধানসভার নিকটে একটি সরকারী স্কুলে হয়। বিশাল জায়গা নিয়ে গঠিত এই পুজোর একটি বিশেষ উল্লেখনীয় দিক যে পুজো কমিটির নিজস্ব খাবারের ব্যবস্থা। বিনিময় মূল্য অবশ্যই আছে, তবে যে বিরিয়ানিটা আমরা আজ খেলাম সেটা বোধহয় দিল্লির সেরা বিরিয়ানির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। লম্বা লম্বা চালের বিছানায় তুলতুলে মাটনের টুকরো। স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। কাশ্মীরী গেটের একচালার সাবেকি ঠাকুর সত্যিই তার নিজস্ব সত্তা নিয়ে আপন আলোয় উজ্জ্বল।
তিমারপুরের দুর্গাপুজোটি তার আড়াই কিমির মধ্যেই। তিমারপুরের সরকারি কোয়ার্টারের ভিতর এক মাঠে। ভিতরে ঢোকার আগেই অদ্ভুত সুন্দর শুভ্র প্রতিমা ও আবছা নীল আলো মনকে প্রশান্ত করে দেয়। মঞ্চে তখন চলছে বীটবক্স চ্যালেঞ্জ। সনাতন এবং আধুনিকের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
যাই হোক, সেখান থেকে বেরিয়ে দ্রুত ফিরে আসতে হল। একে রাত বাড়ছে আর তারপর আজ এক বিশেষ এনগেজমেন্ট আছে। তবে আজ ইচ্ছে আছে, বিনয় মার্গের সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট গ্রাউণ্ড থেকে বেরিয়ে একবার বাইরে বাইরে চিত্তরঞ্জন পার্ক ঢুঁ মেরে আসব। দেখা যাক কদ্দুর কী করা হয়ে ওঠে। সঙ্গে থাকুন। আমাদের জার্নি এখন গভীরে প্রবেশ করেছে। সমুদ্র মন্থনে কতটা অমৃত ওঠে আর কতটা গরল সেটাই দেখার। দিল্লির পুজোর সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করাতে করাতে নিজেও শিক্ষিত হয়ে উঠছি। সত্যিই এবারে পুজোটা ইউনিক।