Advertisment

Delhi Durga Puja 2018: দিল্লিওয়ালা দুর্গাপুজো- অষ্টমী

ঠিক যে ভাবে বালিগঞ্জ অঞ্চল বা কলেজ স্কোয়ারে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হয়ে যায়, পুজোর এ কটা দিন চিত্তরঞ্জন পার্কেও বসবাসকারীদের জন্য কার বা বাইক স্টিকার ইস্যু করা হয়। আর বাকীদের মেট্রো স্টেশনের পার্কিংই ভরসা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অফিশিয়ালি একটু সাজুগুজু না করলে অষ্টমীর বদনাম

Delhi Durga Puja 2018: দুর্গাপুজো যদি হাতের পাঁচটা আঙুল হয় তাহলে অষ্টমী হল মধ্যমা আর নবমী তর্জনী। তাহলে দশমী? কেন বুড়ো আঙুল! সব কিছু ভালো হলে যেমন থামস আপ আর খারাপ হলে কাঁচকলায় সমাপতিত হয়। তেমনই আর কি!

Advertisment

মহাঅষ্টমীর পুজো খুবই স্পেশাল। এদিন দেবী দুর্গার অস্ত্র পূজা করা হয়। কথিত আছে দেবী কালিকা দুর্গার তৃতীয় নয়ন থেকে প্রকাশিত হয়ে মহিষাসুরের চ্যালা চামচা, চণ্ড মুণ্ড আর রক্তবীজকে কাঁচা খেয়ে ফেলেছিল। এই দিন দেবী দুর্গার সঙ্গে ৬৪ জন যোগিনী আর অষ্টনায়িকারও পূজা হয়। অষ্ট নায়িকা দেবীরই আটটি রূপ আবার সহযোদ্ধাও। ব্রাহ্মণী, মহেশ্বরী, কুমারী, বৈষ্ণবী, বরাহী, নরসিংহী, ইন্দ্রাণী এবং চামুণ্ডা। এদিন কুমারী পূজা বা কন্যা পূজাও। উত্তর ভারতে নবরাত্রির সময় এই কন্যা পূজা হয় দেবী দুর্গার এক রূপ হিসাবে। কাল যেমন আমাদের পাশের বাড়িতে আমার ছোট মেয়েকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গেল। আর তিনি বাড়ি ফিরলেন ফল পাকুড় লুচি আর হালুয়া খেয়ে এবং নিয়ে।

আরও পড়ুন, Delhi Durga Puja 2018: দিল্লিওয়ালা দুর্গাপুজো- সপ্তমী

আর আমি? কাল ছিল সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট ক্রিকেট লীগের প্রথম ম্যাচ। কৃষি মন্ত্রকের সঙ্গে খেলা। এদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বহুযুগ আগে ডিডিসিএ লীগও খেলেছিলাম বটে। ভালো প্লেয়ার। তারা আজ আমার মতোই ইয়ে মানে ‘বুড়ো’ হয়েছে। তাও তারই মধ্যে একজন হাতের আঙুলে ফাটা আর পায়ের আঙুলে চোট নিয়ে ৬৫ রান করে ম্যাচ নিয়ে চলে গেল। জাস্ট দশ রান আগে আমার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হল বটে, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ খত্তম! আর আমি? হেঁহেঁ বাওয়া! বুড়ো হাড়ে এখনও দম আছে। দ্বিতীয় ওভারেই স্টেপ আউট করে ওদের লেফট আর্ম পেসারটার বল মাঠ কেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সের বাইরে ফেলে দিয়ে ২৩ বলে ২৮ করে শিক্ষানবিশের মতো আউট হয়ে শেষে বিপক্ষের তিনটের মধ্যে দুটো উইকেট তুলে মন খারাপ করে ঘরে ফেরা।

আর সে কথা থাক। কাল তো মাঞ্জা ডে ছিল। মানে অফিশিয়ালি একটু সাজুগুজু না করলে অষ্টমীর বদনাম। আর তার সঙ্গে ছিল ঝুঁকি দিবসও। চিত্তরঞ্জন পার্ক।

অমৃতসরের পার্টিশান মিউজিয়ামে একটা আর্টিফেক্ট দেখেছিলাম। একটা দেওয়ালে একটা বিশাল বড় কুঠার গাঁথা আছে। আজ যে আমার পড়শি ছিল, সুখে দুঃখে আমার সঙ্গে থাকত সে ভিনদেশি, ভিনধর্মী শত্রুতে পরিণত হল। দেশভাগ! একটা বড় অংশের মানুষের জন্য এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ বয়ে আনল। যে অভিশাপের কালো দাগ মুছতে দু তিন জেনারেশন লেগে যায়। বিদ্বেষের বীজ এখনও বহন করে মানুষ।

আরও পড়ুন, Delhi Durga Puja 2018: দিল্লিওয়ালা দুর্গাপুজো- ষষ্ঠী

সে যাক, ১৯৫৪ নাগাদ বহু পূর্ববাংলা থেকে অপসারিত মানুষজন গঠন করে ইপিডিপি বা ইস্ট পাকিস্তান ডিসপ্লেসড পার্সন্স অ্যাসোসিয়েশন। তারপর শুরু হয় দরবার, দিল্লিতে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের। দীর্ঘ ছ বছর পর, ১৯৬০ সালে দক্ষিণ দিল্লির এক ঊষর বানজার জমি দেওয়া হয় এই ভাগ্যাহতদের। কালের নিয়মে কিছুদিনের মধ্যেই এটি অন্যতম ‘পশ’ অঞ্চলে পরিণত হয়। চিত্তরঞ্জন পার্ক। এখানকার মানুষজন মাছের বাজার, মোচা, কচুর লতি, ধোকার মিশ্রণের প্যাকেট, বড়ি, মুড়ি, দার্জিলিং চা, চপ আর রোলের দোকান, কালী মন্দির আর ছানার মিষ্টির দোকান নিয়ে এটিকে বাঙালি টোলায় পরিণত করে, মিনি কলকাতা!

মোটামুটি ভাবে ১৩টা পুজো এই মিনি কলকাতায় হয়। এর মধ্যে বি ব্লক সর্বজনীন, পকেট ৪০ নবপল্লী, কো-অপরেটিভ, মেলা গ্রাউণ্ড, ডি ব্লক, মিলন সমিতি, দক্ষিণপল্লী আর সিআর পার্ক শিবমন্দির/কালীবাড়ির পুজোই বেশি পরিচিত।

publive-image মোটামুটি ভাবে ১৩টা পুজো এই মিনি কলকাতায় হয়

একটা কাজ এবারের চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজোগুলো মিলে করছে। সকলের জন্য দেবীদুর্গার দ্বার খুলে দেওয়া। সে বৃহন্নলাই হোক আর বিধবাদের বিসর্জনের বরণ। কেউই যেন পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত না থাকে।

আর তার সঙ্গেই রয়েছে এক বিশেষ অঙ্গীকার। বি ব্লক এবং কোঅপরেটিভের পুজো নিজেদের মাঠেই পরিখা খনন করে সেখানে ঠাকুর বিসর্জন দেয়। ফলে, যমুনা দূষণের দায় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে। বি ব্লকের পুজো প্লাস্টিক বিবর্জিত এবং গত বেয়াল্লিশ বছর ধরে পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রেখে চলেছে।

নবপল্লী গত বছরই ধূমধামসহ রজত জয়ন্তী পালন করেছিল। এবারে পুজোর থিম বাংলার বাউল সংস্কৃতি।

ঠিক যে ভাবে বালিগঞ্জ অঞ্চল বা কলেজ স্কোয়ারে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হয়ে যায়, পুজোর এ কটা দিন চিত্তরঞ্জন পার্কেও বসবাসকারীদের জন্য কার বা বাইক স্টিকার ইস্যু করা হয়। আর বাকীদের মেট্রো স্টেশনের পার্কিংই ভরসা। তারপর ইরিক্সা করে বা পায়ে হেঁটে পুজো পরিক্রমা।

পঞ্চমীর রাত থেকেই সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় সি আর পার্ক। যা শেষ হয় দশমীর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে।

তা বলে কি দক্ষিণ দিল্লিতে সি আর পার্কের বাইরে বাঙালিদের জন্য কিছু নেই? আছে আছে। চলে যান আরও দক্ষিণে ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পুজোয় বা একটু এগিয়ে এসে গ্রেটার কৈলাস ২ এম ব্লকের পুজোয়। পরিবেশ বান্ধব হিসাবে এরা সত্যিই উল্লেখনীয়।

আরও পড়ুন, শান্তিনিকেতনের হিরালিনী দুর্গোৎসব

সি আর পার্ক থেকে বেরিয়ে সরিতা বিহারে আসুন। এখানে দুটো পুজো আছে একটি সেন্ট গিরি স্কুলে আর একটি সি ব্লক সরিতা বিহারে। প্যান্ডেলের সৌন্দর্যে বা ঠাকুরের সৌম্যতায় কেউ কারুর থেকে কম যায় না।

আর শেষে বাড়ি ফিরে আসার আগে আশ্রম সর্বজনীন দুর্গা পুজো। এর সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ আছে। দিল্লিতে কুড়ি বছর আগে এসে আমি ডেরা বাঁধি আশ্রমের সানলাইট কলোনির তৃতীয় তলে। রেলগাড়ির কামরার মতো তিনটে ঘর নিয়ে ফ্ল্যাট। নিজের ফ্ল্যাট নিয়ে চলে আসার আগে এই ছিল আমার ছ বছরের আস্তানা। সে যা হোক আশ্রম সর্বজনীন হয় সিদ্ধার্থ এক্সটেনশনের মাঠে। ছোটো ঘরোয়া পুজো।

আজকের ছবিগুলোর সঙ্গে থাকল মিন্টো রোডের পুজোর ছবিও। দিল্লির খুব পুরনো এই পুজো কনট প্লেস ও নিউ দিল্লি রেল স্টেশনের উপান্তে বহুবছর ধরে পুজো করে যাচ্ছে নিষ্ঠা সহকারে। তিমারপুরে ১৯১৪য় সরকারী প্রেসের কর্মী হিসাবে এসে দিল্লির সরকারিভাবে দ্বিতীয় দুর্গাপুজোর সূত্রপাত হয়, তা তো আগেই বলেছি। এই সরকারি প্রেস ১৯৪০এ মিন্টো রোডে আসে। আর সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুজোও। নয়নয় করে ৭৮ হয়ে গেল মিন্টো রোড দুর্গাপুজোর বয়স।

সারা দিনের শেষে, রাত যখন দ্বিতীয় প্রহরে তখন বাড়ি ফিরে ধড়াচুড়ো ছাড়তে ছাড়তে অনুভব করা পুজো এবার মধ্যমা পেরিয়ে তর্জনীতে পড়ছে। আর তারপরেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পগার পার হয়ে যাবেন। আর তো দুটো দিন, আজ নবমী আর কাল...। অবশ্য মন খারাপের কিছু নেই, শেষ থেকেই তো নতুনের শুরু হয়।

তারও আগে একটু আনন্দকে অনুভব করি মনে, শরীরে। চেটেপুটে খেয়ে নিই আমাদের এক গরাস উৎসবকে। সঙ্গে থাকুন তাহলে!

কাল দেখব গুরুগ্রামের পুজোগুলোকে আর হাতের কাছে যারা রয়ে গেল, তাদের।

(ছবিঃ অরুণাভ সেনগুপ্ত, উৎপল ঘোষ, গোপা বসু, রাহুল মুখার্জী ও সৌরাংশু সিংহ)

Durga Puja 2019
Advertisment