নাভিকুণ্ড বা নাভির একটা ঝিনচ্যাক বিলিতি প্রতিশব্দ আছে। ‘বেলিবাটন’! শুনলেই কেমন একটা ঝঙ্কার ওঠে মনের মধ্যে। কিন্তু আমরা ক্যাবারে বা যৌন আবেদন নিয়ে আজকে আড্ডা মারতে বসিনি। কথাটা হচ্ছে আমার বেলিবাটন নিয়ে। মানে তার যৌন আবেদন নিয়ে নয়, বেলি বাটনের আশেপাশে একটা বালির বস্তা হয়েছে কদিন আগে বুধবাজারে গিয়ে একটা স্কিপিং রোপ বা লাফান দড়ি কিনেছি।
লাফান দড়ি কথাটা অন্নেক দিন পরে মনে পড়ল। সেই যখন কাঠের হাতল আর পাকানো দড়ি দিয়ে সদ্য কিশোরীদের মাথায় দ্বৈত বিনুনিতে ফিতে বেঁধে একবার ছেড়ে ছেড়ে লাফানোর তালে তালে আমাদের হৃদয়ের ময়ূর পেখম মেলত। তখনকার কথা। সেই ভারহীন দড়িতে দ্রুত লাফানো সত্যিই চাপের ছিল। তারপর তো কত রেভোল্যুশন এলো এভোল্যুশন এলো। দড়ির জায়গায় এলো প্লাস্টিক, তারপর ফাইবার। রেভোল্যুশনের গতি দ্রুত হল। তারপর ঠিক ডগায় ওজন বাড়িয়ে গতি বাড়াবার জন্য স্প্রিং লাগানো হল। শেষে হাতের গ্রিপে কাউন্টার। মাধুরীর মতো প্রতিটি লাফে, ‘এক, দো, তিন’ না চেঁচিয়ে সাইকেলের শেষে একবার বিজ্ঞের মতো কাউন্টারে দেখে নিলেই হল। অবশ্য ফাঁকিবাজদের জন্য বসে থেকে দড়ি বা ছড়ি ঘুরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কী হবে কেউ জানে না। কিন্তু ফলাফলে একশোয় একশোই লেখা থাকতে পারে।
আরও পড়ুন, দিল্লি লাইভলি: পক্ষ-অন্তর (১)
কিন্তু লাফান দড়িটা কিনে হচ্ছেটা কী? আজ্ঞে, লাফানো হচ্ছে! অবশ্য বৃষ্টির মরশুমে লাফান দড়িতে ঘরের ভিতর কাপড় শুকনোও হতে পারত। তবে আজকাল আমি বস্তা কমাবার জন্য বেশ সিরিয়াস। তবে তাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন আমার সদ্য পুরনো হাঁটুর সমস্যা। অতিরিক্ত লাফিয়ে ফেললে ডান হাঁটুত টনটন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সঠিক জুতো পরে না লাফানোয় পায়ের ডিমে টনটন করতে পারে। জুতো পরে লাফালে সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ঝনঝন আওয়াজ হতে পারে। এসব ভেবে থেমে থেমে লাফ, গুণে গুণে লাফ। আগে দুবার লাফিয়ে তিনবার গোনার একটা দুষ্টুমি থাকত। কিন্তু এখন বস্তাটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে সরাবার জন্য। তাই টানা একশো তো করতেই হয়। কিন্তু সমস্যা হল মাঝখানে আটকে গেলে। তারপর সেই অবস্থা থেকে আবার শুরু করা। একটানে যদ্দুর যেতে পারা যাওয়ার আরও বেশী দূরে। সে যেন হনুমান লাফ দিয়ে মৈনাক পর্বতের মাথায় এক আঙুল ছুঁইয়ে আবার ট্রিপল জাম্প। জনাথন এডওয়ার্ড। অলিম্পিক বিজয়ীর মতো।
তবে সব কিছু ছেড়ে যেটা জরুরি হয় সেটা হলো খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দেওয়া। ইয়াব্বর গজালের মতো স্যুইট টুথ আমার। তাকে রীতিমত কৃচ্ছসাধনের র্যাঁদা ঘষে কমসম করে রাখতে হয়। দিল্লিতে তো আবার ঘি, ননী, মাখন, সর, মালাই ছাড়া কথাই বলে না। রাস্তায় বেরোলেই লস্যির মাঠা তোলা গ্লাস, নয়তো চুরচুর নান, নয়তো, ঘি মাখানো পরোটা আপনার দিকে সতৃষ্ণ নয়নে চেয়ে আছে। আর তার আশে পাশে মধ্যবয়স্ক স্যুইস বল গড়িয়ে গড়িয়ে হেটে চলেছে। প্রত্যেকের চোখের কোলে কালি প্রত্যেকের বুকের নিচে কোলেস্টেরলের শ্রেণিমালা।
স্টাইল মারার জন্য প্রোটিন শেক খেয়ে দুশো কিলো ওজন তুলে তো কয়েকদিন অপর লিঙ্গের চোখের মণি হবার চেষ্টা করা গেল। কিন্তু তারপর, চর্বি যে প্যাসকেলের সূত্র মেনে কোন দিকে থেকে পুক করে বেরিয়ে আসবে তার ইয়ত্তা নেই।
বাস স্ট্যান্ডগুলোতে পরিবেশ দূষণ বিরোধী সাইকেলগুলো পড়ে পড়ে মরচে খাচ্ছে। অফিসের চেয়ারে পিঠের উপর পাথর আর টেবিলে চা কফি সামোসা পকোড়ার পাহাড় জমা হচ্ছে। শারীরিক তো ছেড়েই দিন মানসিক অশান্তির রোলকলে দিন দিন কাটা দাগ বেড়েই চলেছে। এই সময়ে আপনি কী করতে পারেন? স্কিপিং? অ্যাঁ? আজ্ঞে হ্যাঁ স্কিপিং! আমাকে একবার এক বাকতাল্লাবাজ বলেছিল তার নাকি দিনে হাজার স্কিপিং করে পেটানো চেহারা হয়ে গেছে। জানি না গাঁজায় ঠিক কতটা দম ছিল, তবে চোর পেটানো চেহারা নিয়ে লোকে গর্ব করলে কিস্যুটি বলার থাকে না।
তবে সত্যি কথা বলব? গত দিন দশেক লাফান দড়িটা দিয়ে নেচে কুঁদে দেখছি প্যান্টের কোমরগুলো আবার আলগা হয়ে পড়েছে। ওঠানামায় একটা স্ফুর্তির লক্ষণ টের পাচ্ছি। আর সব থেকে বড় কথা, একটার জায়গায় দুটো ডিম সিদ্ধ খেতে গেলে পার্শ্ববর্তিনী খালি মুচকি হাসছেন, বলছেন না কিছুই। কে না জানে, দুটো ডন বৈঠক বা নিভৃতে দুটো ডাম্বেল নিয়ে ঘুপ ঘাপের থেকে, লাফান দড়ির নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত ছপছপ শব্দ অনেক বেশী আশ্বাস প্রদানকারী।
আজকের পাক্ষিক উড়ান শেষ করার আগে একটা ছোট্ট গল্প নিয়ে শেষ করি। আমার এক সম্পর্কিত বোনঝি, ধুপ ধাপ মোটা হচ্ছিল। তারপর তার মা তাকে রোজ সকালে উঠিয়ে মাঠে হাঁটতে পাঠাতে শুরু করল। প্রথম দিকে প্রচুর প্রতিরোধ প্রতিবাদ। ধীরে ধীরে কমে এল। মাও খুশি মেয়েও খুশি। কিন্তু কদ্দিন পরেই সমস্যাটা শুরু হল। মা ভাবছে, “মেয়ে আমার রোজ একঘণ্টা হাঁটছে তাও ঝরছে না কেন?” তা গোয়েন্দাগিন্নি করতে গিয়ে পরদিন সকালে আবিষ্কার করল, “মেয়ে রোজ নিচে পার্কে গিয়ে বেঞ্চিতে শুয়ে ভঁসভঁসিয়ে ঘুমোয়! ব্যাস শরীরচর্চার সেখানেই ইতি।
সুস্থ থাকুন, সুন্দরও। আবার ফিরছি।