দেশের বিভিন্ন স্তরে ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। একেতেই মহামারী তার ওপর আবার মশার প্রকোপ জনজীবনের ওপর যেন রোগের দীর্ঘশ্বাস একেবারেই কমার নয় উল্টে দিনের পর দিন নতুন নতুন উৎপত্তি। ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ কিন্তু একেবারেই কম নয়। তার প্রথম এবং প্রধান কারণ সেইভাবে এর কোনও টিকা নেই। চিকিৎসায় রয়েছে টালমাটাল পরিস্থিতি। করোনা এবং ডেঙ্গুর গ্রাসে একেবারেই জর্জরিত মানুষের জীবন।
ডেঙ্গু সাধারণত স্ত্রী মশার কামড়ের ফলেই মানুষের শরীরে দানা বাঁধে। এবং বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যে বেলার দিকে মশা কামড়ালে এই রোগ দেখা দেয়। সাধারণত দেখা যায় ডেঙ্গু হলে অল্প বিস্তর শরীর খারাপ থাকলে কিন্তু সেটিই বাড়িতেই বেশ কিছু ওষুধ পথ্য এবং নিয়মের জেরে কমে যায় কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস DENV-2 এটি কিন্তু বেজায় জটিল এবং বাড়িতে এর থেকে রেহাই মেলে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ডেঙ্গুর ভাইরাসের মধ্যেও চার ধরনের লক্ষণ মেলে। DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4, এগুলির মধ্যেই দ্বিতীয়টি কিন্তু মারাত্বক এবং বলা উচিত এটি মৃত্যুর দিকে পর্যন্ত ঠেলে দিতে পারে। তার সঙ্গেই অভ্যন্তরীণ রক্তপাত এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটিই খারাপ হতে পারে। তাই এটি কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। নিজেকে এর থেকে সাবধানে রাখতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যেবেলা - একেবারেই জানলা দরজা খোলা রাখা চলবে না তেমনই চলবে না নিজেকে আলগা ছেড়ে দেওয়া।
এবছরের ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। তারা মনে করছেন এইবছর DENV 2 দ্বারা আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর এবং সকলেই শারীরিক ভাবে নিদারুণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয় এর ক্রনিক প্রভাবে যেমন মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন তেমনই বেশ নতুন কিছু ভাব যেমন অতিরিক্ত বমি, উচ্চ তাপমাত্রা, গা হাত পা ব্যথা এগুলি ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে মানুষকে। ফলেই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মানুষ মানসিক সংকুলান হারিয়ে ফেলছে।
তারপরেও কেন এর সঠিক চিকিৎসার পথে কোনও ভ্যাকসিনের হদিশ মেলে না এই বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। তথাকথিত ভাবে এর কার্যকরী ভ্যাকসিন সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তবে ২০১৫ সালে dengavaxia নামক একটি ভ্যাকসিন লাইসেন্স প্রাপ্ত হলেও এটি নিয়ে সেইভাবে কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় নি। বলা হয় ৯ থেকে ৪৫ বছরের মানুষরা এটি নিয়ে সক্ষম। তারপরেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়, সর্বসাধারণের জন্য একেবারেই নয়, যারা একবার ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত তারাই নিতে পারবেন এই ভ্যাকসিন এবং এমনও সম্ভাবনা রয়েছে যাদের কোনোদিন ডেঙ্গু হয় নি, এক ভ্যাকসিনের ফলে তারা নতুন করে আক্রান্ত হবেন। বাকি যেগুলি রয়েছে সেগুলি কেবল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এতে ক্রনিক ডেঙ্গু থেকে বাঁচা যাবে না।
সাম্প্রতিক জানা গেছে, ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বেঙ্গালুরুতে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি ডিএনএ ভ্যাকসিন ফাইল তৈরি করেছেন। গবেষকরা ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ থেকে EDIII নামক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাল অংশ নির্বাচন করেছেন। DENV2 সেরোটাইপ থেকে NS1 শনাক্ত করেছেন, যা মারাত্মক ডেঙ্গুর কারণ হিসেবে পরিচিত। এর ইমিউন প্রোফাইল এবং রেসপন্স যদি ঠিক থাকে তারপরেই এনকোডিং এবং ডিজাইনের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের প্রথম মডিউল সামনে আসতে পারে। এই নিয়েই যথেষ্ট আশাবাদী বিজ্ঞানী থেকে চিকিৎসক সকলেই। তারপরেই যদি কমানো যায় এর সংক্রমণের হার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন