/indian-express-bangla/media/media_files/2025/11/05/deshbandhu-chittaranjan-das-2025-11-05-10-44-07.jpg)
Deshbandhu Chittaranjan Das: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জীবন ছিল ত্যাগের প্রতীক।
Deshbandhu Chittaranjan Das: আজ ৫ নভেম্বর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জন্মবার্ষিকী। দেশবন্ধু ছিলেন এমন এক মহান মানুষ, যিনি শুধু রাজনীতির মঞ্চেই নয়, মানবতার প্রতিটি পরিসরে এক আলোকবর্তিকা হয়ে আছেন। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, ন্যায়ের জন্য তিনি যা ত্যাগ করেছেন, তা আজও কোটি মানুষের মনে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ছেলেবেলা থেকে রাজনীতি
চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। তাঁর বাবা ভুবনমোহন দাশ ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সলিসিটার। মা নিস্তারিণী দেবী ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, শান্ত এবং অধ্যবসায়ী। ভবানীপুরে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় লন্ডন মিশনারি স্কুলে, পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন।
আরও পড়ুন- তিন বছর পর গ্রামে ফিরছে রোজগার, বিশেষ শর্তে বাংলায় ফের শুরু হতে পারে ১০০ দিনের কাজ
১৮৯৩ সালে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে ফিরে আসেন কলকাতায়। প্রথমে কোর্টে তেমন সাফল্য পাননি, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর যুক্তিবাদী চিন্তা, মেধা এবং সততা তাঁকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবীর আসনে তুলে ধরে। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত মামলা ছিল অরবিন্দ ঘোষের আলিপুর বোমা মামলা, যেখানে তাঁর যুক্তিতর্ক অরবিন্দ ঘোষের মুক্তি নিশ্চিত করেছিল। এখানেই তাঁর অসাধারণ বিচারবুদ্ধি এবং দেশপ্রেম প্রমাণিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন- কলকাতার কাছেই হনিমুনের দুর্দান্ত ঠিকানা, কম খরচে সেরা ডেস্টিনেশন!
দেশবন্ধু ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জুড়ে গিয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে প্রমথ মিত্রের সঙ্গে 'অনুশীলন সমিতি' গঠন করেন। ১৯১৯ সালে রাওলাট অ্যাক্ট বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করে নিজের ব্যারিস্টারি ত্যাগ করেন। দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এত গভীর ছিল যে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে তিনি আন্দোলনের পথে নামেন। এই ত্যাগের কারণেই দেশবাসী তাঁকে ভালোবেসে নাম দেয়— 'দেশবন্ধু'।
আরও পড়ুন- আপনার কিডনি কি ড্যামেজের দিকে? অবিলম্বে জানুন কীভাবে বুঝবেন!
১৯২৩ সালে মতিলাল নেহরুর সঙ্গে মিলে তিনি গঠন করেন স্বরাজ পার্টি। যার লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিক পথে স্বরাজ অর্জন। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস পায় নতুন দিশা, আর রাজনীতি পায় বাস্তববাদী দিকনির্দেশ। তিনি সুভাষচন্দ্র বসু, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি ও বিধানচন্দ্র রায়ের মত নেতাদের গুরু এবং অনুপ্রেরণা হিসেবেও রাজনৈতিক জীবনে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- মানবিক বেদনা, সিনেমার কবি! জন্মশতবর্ষে অনন্য চলচ্চিত্র প্রতিভা ঋত্বিককে স্মরণ
চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন বিরল দানবীর। নিজের সম্পত্তি, অলংকার, এমনকী আয়-রোজগারও উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের সেবায়। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল মানবতার স্মারক হিসেবে আজও অম্লান। তিনি বিশ্বাস করতেন— 'মানুষের কল্যাণই ঈশ্বরের সেবা।'
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ছিলেন কবি এবং সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর রচিত গ্রন্থ — 'মালঞ্চ', 'সাগর সংগীত', 'অন্তর্যামী' — প্রমাণ করে তিনি কত গভীরভাবে মানবজীবন এবং সমাজ নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি 'নারায়ণ' পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। যেখানে জাতীয় চেতনা ও সাহিত্য এক অসাধারণ সেতুবন্ধন ঘটিয়েছিল। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে, দার্জিলিঙে তাঁর জীবনাবসান হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন— 'এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ'। নিজের জীবনযাত্রা দিয়ে দেশবন্ধু বুঝিয়ে গিয়েছিলেন, ত্যাগ, সাহস আর মানবতার পথেই গড়ে ওঠে দেশ।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us