এই মন্দিরে পুজোর সময় নাকি দেবী স্বয়ং উপস্থিত হয়েছিলেন। আশীর্বাদ করতে হাত রেখেছিলেন পূজারির মাথায়। আবার একদিন হলুদ শাড়ি পরা একটি অপরিচিত বাচ্চা মেয়েকে হঠাৎ মন্দিরে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, তারপর গোটা মন্দির চত্বরে তাকে আর দেখা মেলেনি। ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরে দেবীর কাছে এসে মনস্কামনা জানালে, তা অপূর্ণ থাকে না। জাগ্রত এই অলৌকিক মন্দির দেবী বগলার। যাঁর পূজা হয় তন্ত্রমতে।
দশমহাবিদ্যার মধ্যে অষ্টম মহাবিদ্যা হলেন দেবী বগলামুখী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশ করেন। অন্যমতে, শত্রুনাশ করেন। দেবীর হাতে থাকে মুগুর অস্ত্র। উত্তর ভারতে এই দেবী পীতাম্বরী নামেও পরিচিত। বগলামুখী শব্দটির মধ্যে বগলা শব্দের অর্থ হল ধরা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুখ শব্দটি। যার মিলিত অর্থ- দেবীর মুখের মধ্যে রয়েছে গোটা পৃথিবী। অথবা, যিনি মুখ দিয়েই সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
এই দেবী সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে রূঢ় দৈত্যের পুত্র দুর্গম দেবতাদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। দুর্গমের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা তাঁকে বর দিয়েছিলেন। বর পেয়ে দুর্গম স্বর্গ দখল করে দেবতাদের বিতাড়িত করেছিল। সেই সময় দেবতারা দেবী ভগবতীর আরাধনা করেন। দেবতাদের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী আবির্ভূত হয়ে দুর্গমের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। দেবীর দেহ হতে কালী, তারা, ভৈরবী, রমা, মাতঙ্গী, বগলা, কামাক্ষ্যা, জম্ভিনী, মোহিনী, ছিন্নমস্তা, গুহ্যকালীর মত মহাশক্তির উদয় হয়েছিল। তারাও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দুর্গম যুদ্ধে পরাজিত হন।
বৈদিক মতে যে সব দেবতার পুজো হয়, তাঁদের মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু, তন্ত্রমতে যে দেব বা দেবীর পুজো হয়, সেই সব দেব-দেবীর মন্দিরের সংখ্যা সবসময় তুলনায় কম থাকে। দেবী বগলার মন্দিরও তাই পশ্চিমবঙ্গে হাতেগোনা। এখন যে মন্দিরের কথা বলছি, এই মন্দির রয়েছে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার কাছেই। আরও স্পষ্ট করে বললে, উত্তর কলকাতার লাগোয়া দমদমে, দেবীনিবাস রোডে।
আরও পড়ুন- বেশ কয়েক শতাব্দীর পুরোনো পুজো, জাগ্রত দেবীকে ভীষণ মানেন ভক্ত-বাসিন্দারা
কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে? দমদম স্টেশনে নেমে নাগেরবাজারগামী অটো বা বাসে চেপে নামতে হবে 'মতিঝিল গার্লস স্কুল' স্টপেজে। সেখানে উলটো ফুটে গিয়ে বাসন্তী সুইটসের পাশ দিয়ে পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলেই দেবী বগলামুখীর এই মন্দিরে পৌঁছনো যাবে। মন্দিরটি পাঁচটি চূড়া-বিশিষ্ট। তাই একে পঞ্চরত্নের মন্দিরও বলা হয়। আশপাশের অঞ্চল তো বটেই। জাগ্রত এই মন্দিরে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা নিয়মিত আসেন। মনস্কামনা পূরণের পর মন্দিরে এসে সাধ্যমত দান করে যান।