শারদোৎসবের সুরে এখন মগ্ন চারিদিক। উমার বাপের বাড়ি আসার প্রস্তুতি তুঙ্গে। কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর ঘরে আসার পথে। মহামায়ার অপরূপ সাজ যেমন তুলির টানে শিল্পী সম্পন্ন করেন তেমনই কিন্তু তাঁর প্রতিটি অস্ত্র পৃথিবীকে আগলে রাখার এক একটি মহিমা। স্বর্গলোকে দেবতাদের অসুরপতির কবল থেকে রক্ষা করতেই দেবী দুর্গার সৃষ্টি করেন স্বয়ং ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং মহেশ্বর।
কেবলমাত্র নারী দ্বারাই বধিবে মহিষাসুর। দেবতারা নিজেদের অস্ত্র দ্বারাই সাজিয়ে তুলেছিলেন দেবীকে। দশ হাতের দশটি অস্ত্র ভু-মণ্ডলের নানান পরিসরের প্রতীক। এর ব্যাখ্যা থেকে বিস্তার জুড়ে অনেক গল্প।
ত্রিশূল: স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব দেবীর হাতে তুলে দেন ত্রিশূল। ত্রিশূল মানেই তিনটি সরু ফলা যার আসল অর্থ ত্রীগুন সমৃদ্ধ। প্রথম তমা ( নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রবণতা ),দ্বিতীয় রজা ( অতি সক্রিয়তা এবং ইচ্ছে ) তৃতীয় সত্ত্ব ( ইতিবাচক এবং বিশুদ্ধতা )। এই তিন গুন বিজয়ে সবথেকে কার্যকরী। পুরাণ মতে মহাদেবের ত্রিশূল বিদ্ধ কোনও কিছুই পৃথিবীতে প্রাণ ধরে রাখতে সক্ষম নয়।
খাঁড়া : খাঁড়া কিংবা খড়গ বুদ্ধি তীক্ষ্ণতা নেতিবাচক বৈষম্য কাটিয়ে ওঠার প্রতীক। গণেশ দেবীকে দিয়েছিলেন খড়গ। এর তীক্ষ্ম এবং জোরালো ভাব অশুভ বিনাশে সক্রিয়।
বজ্র : দেবরাজ ইন্দ্র দেবীকে বজ্র দিয়ে সিদ্ধ করেন। বজ্র গগন ভেদী এবং দৃঢ়। কথায় বলে বজ্রবানে সংহতি প্রস্ফুটিত। বাম হাতেই মা এর বজ্র থাকার নির্দেশ।
শঙ্খ: বরুণ দেবের থেকে দেবী লাভ করেন শঙ্খ। শঙ্খধ্বনি শুভ সূচনা ইঙ্গিত করে। দেবী অসুর বোধের আহ্বান জানিয়েছিলেন শঙ্খ দিয়েই।
পদ্ম: স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা দেন পদ্ম। পদ্ম নিজের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ সংসারে আলো দেখাতে সক্ষম। এটি শোভা বর্ধনের সঙ্গে সঙ্গে চেতনা জাগরণের প্রতীক। মানুষের ক্ষণস্থায়ী মনোভাব এবং সত্যের পথে চালিত করার নিদর্শন।
সুদর্শন চক্র: পালনকর্তা বিষ্ণু উপহার দেন চক্র। সুদর্শন চক্র যুদ্ধ পরিসরে পৃথিবীর সবকিছু খণ্ডন করতে অবিচল। এবং শাস্ত্রের ভাষায় সদা আবর্তিত অর্থাৎ ভু বিশ্ব সদা ঘূর্ণায়মান। দেবীর হাতে এর অর্থ সর্ব শক্তির আধার তিনি এবং কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
তির ধনুক: দেবীকে তীর ধনুক দিয়ে সাজিয়ে দেব পবন দেব এবং সূর্য দেব। একজন যোদ্ধার সবথেকে বড় প্রতীক তীর ধনুক। শক্তি এবং সহ্যের প্রতীক। শত্রু বিনাশে এর জুড়ি মেলা ভার।
সাপ: পুরাণ অনুযায়ী ডান দিকের তৃতীয় হস্তে দেবীর সর্প অস্ত্র হিসেবেই বিরাজমান। সর্প শুদ্ধ চেতনা এবং স্থিতি নির্দেশ করে। মন শান্ত রেখে অগ্রসরে সুরাহা দিতে পারে। শ্রী গণেশ এই ব্যপ্তিতেই সর্প জড়িয়ে রাখেন পৈতের অনুকরণে।
ঘণ্টা: ইরাবতী পুত্র ঐরাবত অর্থাৎ দেবরাজ ইন্দ্রের সাদা হস্তী দিয়েছিলেন ঘণ্টা। এটি শুভ্রতা এবং সততা জাগ্রত করে। তার সহিত এটি শত্রুর তেজ কম করতেও কার্যকরী।
গদা: যমরাজ দিয়েছিলেন গদা। আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। শাস্ত্রে যমরাজের আক্ষরিক অর্থ কালের সঙ্গে নির্দেশিত। এই গদা কলদণ্ড নামেও অভিহিত। গদার সম্মুখভাগ শক্তিতে হার মানাবে অনেককিছুই।
তবে পুরাণে উল্লেখিত, মহামায়ার অস্ত্রের ভান্ডারে বিশ্বকর্মা দিয়েছিলেন কুঠার। এটি ভয় না পাওয়ার চিহ্ন হিসেবেই লাভ করেছিলেন দেবী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন