হাওড়া জেলার ডোমজুড়ের মাকড়দহ। হাওড়া থেকে মুন্সিরহাট, ডোমজুড় সড়কের পাশে এই গ্রাম। এই গ্রামের দেবী মাকড়চণ্ডী। দেবীর নামেই জায়গাটির নাম হয়েছে মাকড়দহ। বড় রাস্তার ওপর মাকড়দহ বাজারের মধ্যে অনেকটা জায়গাজুড়ে দেবীর মন্দির। এই জায়গা এবং দেবীকে নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে।
কথিত আছে, একটা সময় সরস্বতী নদী এই অঞ্চল দিয়ে বয়ে যেত। বর্তমানে তার প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি জলাশয় আজও রয়েছে এই এলাকায়। কথিত আছে শ্রীমন্ত নামে এক সওদাগর সরস্বতী নদীপথে বাণিজ্য করতে যাওয়ার সময় স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীর মন্দির নির্মাণ ও পুজো করেছিলেন। এই মন্দির চত্বরে আজও তিনটি পাথরের টুকরো দেখা যায়।
স্থানীয়দের দাবি, এই সব পাথর শ্রীমন্ত সওদাগর নির্মিত প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। বর্তমান প্রবেশদ্বার, দেবীর মন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা, ভোগমন্দির এবং শিবমন্দির মাহিয়ারির জমিদার রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরী করে দিয়েছেন। মন্দিরের ফলক থেকে জানা যায়, বাংলার ১২২৮ সনে জমিদার রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরী বর্তমান আটচালার মন্দিরটি বানিয়ে দিয়েছিলেন।
এখানে দেবীর মূর্তিটি লাল টুকটুকে সিঁদুরে রাঙানো পাথরখণ্ড। দেবীর মাথায় রয়েছে রুপোর চুড়ো। এছাড়া রয়েছে রুপোর ত্রিনয়ন। দেবীর নাকে নাকছাবি। কানে রয়েছে কানপাশা। মূলে মন্দিরের সামনেই রয়েছে নাটমন্দির। মাকড়চণ্ডী মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দেবীর ভৈরবের ছোট পূর্বমুখী মন্দির রয়েছে। এছাড়া পিছনে রয়েছে সরস্বতী কুণ্ড।
আরও পড়ুন- ভিড় করেন লক্ষাধিক পুণ্যার্থী, জাগ্রত দক্ষিণ ২৪ পরগনার খড়গেশ্বর শিব মন্দির
ভক্তদের দাবি, একটা সময় দেবীর মূর্তিটি ছিল বিশাল আকারের। যার জেরে পূজারিকে প্রতিদিন মইয়ে উঠে পুজো করতে হত। কষ্ট করে পুজো করতে হওয়ায় একদিন পূজারি দেবীকে তিরস্কার করেছিলেন। তার জেরেই নাকি দেবীর শিলার অনেকখানি অংশ পাতালে প্রবেশ করেছে। সেই সময় নাকি পূজারি ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তারপর থেকে শিলার পাতালপ্রবেশ বন্ধ। কথিত আছে, এখানে পঞ্চমুন্ডির আসনে বহু সন্ন্যাসী তপস্যা করেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভক্তরা তাঁদের মনস্কামনা পূরণের জন্য এই মন্দিরে আসেন, দূর-দূরান্ত থেকে।